নিজস্ব প্রতিবেদক :চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ি এ এম জালাল উদ্দিন ওরফে রোকন (৪০) কে আটকের পর তাকে মারামারি ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর একটি ‘মিথ্যা মামলায়’ ফাঁসিয়েছেন রোকনকে।
গতকাল রাতে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘বনফুল শো-রুম’ থেকে রোকনকে আটক করা হয়। পরে পটিয়া থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে ওসি নিশ্চিত করেন। তবে স্থানীয় সূত্র এবং পরিবারের দাবি, রোকন একজন পরিচ্ছন্ন ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে আটকের কারণ জানতে চাইলে ওসি নাজমুন নুর জানান, ‘ডেভিল হান্ট অভিযানের’ অংশ হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে। তবে জমিজমা সংক্রান্ত কোনো বিষয় তিনি জানেন না। জেলা পুলিশের মনিটরিং টিম কিংবা এএসপি (ডিবি)-এর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) রাসেল পিপিএম জানান, ‘আমি মাত্র পটিয়া ওসির কাছ থেকে জানতে পারলাম যে রোকন নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। এর বাইরে কিছু জানি না।’ তার এই বক্তব্য থেকে অনুমান করা হচ্ছে, পটিয়া থানার ওসি একক সিদ্ধান্তেই রোকনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
এদিকে, বিষয়টি জানতে পটিয়া সার্কেল এসপি মো. আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি ছুটিতে রয়েছেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।
একইভাবে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বিপিএম-সেবা কে ফোন করা হলে পাওয়া যায়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত জানানো হলে তিনি বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আসাদুজ্জামানকে জানাতে বলেন। তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও এএসপি আসাদুজ্জামানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। রাত ২টার দিকে রোকনের পরিবার সরাসরি পটিয়া থানায় গিয়ে ওসির কাছে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।
গ্রেপ্তারকৃত রোকন কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের (২ নম্বর ওয়ার্ড) মৃত হাজী এটিএম হাশেমের ছেলে। তিনি কর্ণফুলী উপজেলার স্টুডেন্ট কেয়ার মডেল স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, সরকারি সনদপ্রাপ্ত এআই টেকনিশিয়ান, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) চরলক্ষ্যা ইউনিটের টিম লিডার, কর্ণফুলী উপজেলা শুভ সংঘের পরিচালক এবং একজন সফল খামারি ও উদ্যোক্তা।
এছাড়া তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রক্তদান কর্মসূচি ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। স্থানীয় মহলের মতে, পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করা, কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি অন্যায়ভাবে মামলায় ফাঁসেন, তাহলে সেটি আইনের অপব্যবহার হিসেবে গণ্য হবে।
রোকনের পরিবারের দাবি, তিনি কখনো কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এবং কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।
কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক এলাকার স্থানীয়রা জানান, শান্তিরহাট বাজার সমিতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও একটি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কোনো একটি পক্ষ পুলিশকে ব্যবহার করে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হলে আসল সত্য উদঘাটন হতে পারে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর দায়ের হওয়া পটিয়া থানার ৩৪ নম্বর মামলায় তাকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৫০৬(২) পেনাল কোড ও বিস্ফোরক আইনের ৩/৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন, একজন সমাজসেবী এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিকে কীভাবে এমন একটি মামলায় জড়ানো হলো? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল আচরণ নিয়েও উঠেছে সমালোচনা। স্বচ্ছ তদন্ত ও সঠিক প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে তা নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা মুহাম্মদ জসিম ও মহি উদ্দিন জানান, রোকন কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আমরা জানতে পেরেছি, একটি এডিট করা ভিডিওর ভিত্তিতে চক্রান্তমূলকভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই ও তদন্তের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু পটিয়া থানার ওসি কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়াই অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
সমস্ত অভিযোগের বিষয়টি পুনরায় জানাতে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

Discussion about this post