জাহিদ হাসান: পানির অপর নাম জীবন। পানি বিহীন বেঁচে থাকা অসম্ভব। বাংলাদেশ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন কভারেজের দিক দিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা শহরে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণ করে থাকে। দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোন হোটেলেই পানি বিশুদ্ধ করণের কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতিটা হোটেল ও খাবারের দোকান গুলোতে সাধারণত সরাসরি ট্যাংকির পানি গ্রাহকদের পান করতে দেওয়া হচ্ছে। যা ন্যূনতম পরিশোধিত নয়। এই ধরণের পানিতে ব্যাকটেরিয়া, শেওলা, মরিচা ও রাসায়নিক দূষণ সহ ভয়ানক জীবাণু থাকে। ফলে হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ নানা ধরনের পানি বাহিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের শরীরে, যা নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করার কথা থাকলেও হোটেল রেস্তোরাঁয় কখনো অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি।
ভুক্তভোগী নাহিদুজ্জামান রানা জানান, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। হোটেলে খাবার খেতে এসে বোতল জাত করা পানি কিনে খাওয়া অসম্ভব ব্যপার। বিধায় হোটেলে ট্যাংকিতে জমা ময়লা, শেওলা যুক্ত পানিই খেতে হয়।
কুষ্টিয়া সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, গল্পকার, লেখক ও সংগঠক আসমান আলী জানান, আগে ছিল পানির অপর নাম জীবন। এটা মডিফাইড হয়ে হলো বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। স্বাস্থ্যবিদদের মতে মানব দেহে যে-সব রোগ দেখা দেয় তার সিংহ ভাগ পানি জনিত। অথচ এদেশের হোটেল – রেস্তোরাঁ গুলোতে যে পানি ব্যবহার করা হয় তা একেবারেই অশুদ্ধ। অথচ প্রত্যেক হোটেলে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে প্রতিশ্রুতি দিয়েই মালিকরা লাইসেন্স নেন। আবার সব হোটেল রেস্তোরাঁর লাইসেন্স ও নেই এটাও দুঃখজনক। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কনজিউমার রাইটস সিআরবি সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান জানান, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা প্রতিটি হোটেল মালিকের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। কিন্তু যথাযথ তদারকির অভাবে এ বিষয়টি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এগুলো তদারকি করলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, মানব দেহে অধিকাংশ রোগী সৃষ্টি হয় বিশুদ্ধ পানির অভাবে। হোটেল মালিকরা নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে নিজ উদ্যোগে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবে। কোন ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, হোটেল গুলোতে পানি বিশুদ্ধ করণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় পানি বাহিত হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিগত ছয় মাসে পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স সীমার প্রায় ৬৯৮ জন ও পাঁচ বছরের নীচে শিশু ৪৪৭ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে সাধারণ রোগী।

Discussion about this post