এস আর সেলিম দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে দুদকের জব্দ করা টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছে দলিল লেখকরা জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। তারা বলছেন, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারীর কাছ থেকে যে টাকা জব্দ করা হয়েছে তা ওই দিনে জমি রেজিস্ট্রির ফির টাকা। টাকা জব্দ করায় ওই দিনের জমি রেজিস্ট্রির ফি জমা হয়নি। তাই ওই টাকা ফেরত দিয়ে পেন্ডিং দলিল গুলো রেজিস্ট্রির দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে সুরাহা করারও দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখকরা জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলামের কাছে সরাসরি এই চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে ৮০ জন দলিল লেখক স্বাক্ষর করেছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে গত ২৬ জানুয়ারি তিন শতাধিক দলিল রেজিস্ট্রির জন্য দলিলের ফিসহ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী জান্নাতুল আক্তার মুন্নির কাছে জমা দেয়া হয়। এর মধ্যে ১১০টি দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার পর অফিসটিতে আকস্মিকভাবে দুদকের অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানের কারণে দলিল রেজিস্ট্রির সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে রেজিস্ট্রির জন্য জমা দেয়া দলিলের ফি ফেরত দেয়া হয়নি। এসব রেজিস্ট্রি ফির টাকা দুদক জব্দ করে নিয়ে যায়।
ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর ৫২ ধারা রসিদ প্রদান করার কথা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দলিল রেজিস্ট্রির কাজে ব্যস্ত থাকায় রেজিস্ট্রির পরবর্তী দিনে রসিদ দিয়ে থাকেন। এই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সপ্তাহের দুইদিনে অন্তত ১১০ থেকে ১২০টি দলিলের জাবেদা নকল উত্তোলন হয়। অন্যদিনের মতো ২৬ জানুয়ারি ১১০-১২০টি দলিলের জাবেদা নকল উত্তোলনের আবেদন জমা পড়ে। সেই টাকা অফিস সহকারী জান্নাতুল আক্তার মুন্নির কাছে জমা দেয়া হয়। দুদক কর্মকর্তারা অভিযানকালে জান্নাতুল আক্তার মুন্নির কাছ থেকে ওই টাকাও জব্দ করেন। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ লাঘবের স্বার্থে জমা পড়া দলিলগুলো রেজিস্ট্রির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং একই সঙ্গে জমা দেয়া রেজিস্ট্রি ফির টাকা ফেরত দেয়ার দাবি জানান দলিল লেখকরা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বছরে ১৩-১৪ হাজার দলিল রেজিস্ট্র হয়। স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় ২০২১ সালে প্রায় ৬ হাজার দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। চলতি বছরে বিপুলসংখ্যক দলিল রেজিস্ট্রির অপেক্ষায় আছে। এতে ১৪ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ও দুর্গম চরাঞ্চল থেকে আসা জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুদকের আকস্মিক অভিযানে জমা দেয়া ফির টাকা জব্দ করায় দলিল রেজিস্ট্রির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই জব্দ করা দলিল রেজিস্ট্রির টাকা ফেরত দেয়ার মাধ্যমে রেজিস্ট্রি না হওয়া দলিলগুলো রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার দেয়ার দাবি জানিয়েছেন দলিল লেখকরা। জব্দ করা টাকা ফিরিয়ে না দিলে জমা পড়া দলিল রেজিস্ট্রির ফি পুনরায় দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. জাকারিয়া মোবাইল ফোনে জানান, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান চালিয়ে হিসাববহির্ভূত তিন লক্ষাধিক টাকা জব্দ করা হয়। এই অর্থের উৎস সস্পর্কে অফিস সহকারী জান্নাতুল আক্তার মুন্নি গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে না পারায় তাকে আটক করে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পুরো বিষয়টি আদালত নিষ্পত্তি করবে। উপপরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, জব্দ করা টাকা ফেরতের বিষয়ে দলিল লেখকরা অথবা ওই অফিস সংশ্লিষ্টরা কার কাছে কী দাবি করছেন সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। আদালত থেকে যে আদেশ আসবে সেটিকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। এক্ষেত্রে আদালতের বাইরে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলামের বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পালের নেতৃত্বে দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান চালানো হয়। প্রধান অফিস সহকারী জান্নাতুল আক্তার মুন্নির ড্রয়ার থেকে হিসাববহির্ভূত ৩ লাখ ১ হাজার ২শ টাকা জব্দ করে দুদক। এই টাকার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধান অফিস সহকারী জান্নাতুল আক্তার মুন্নিকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় জান্নাতুল আক্তার মুন্নি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ছবির ক্যাপশন : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। ফাইল ছবি।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post