জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: মহানগরের আশপাশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম উত্তর ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হলেও ১১ বছরেও টনক নড়েনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। ২০১৩ সালের অক্টোবরে কেন্দ্র থেকে দেওয়া লেজেগোবরে কমিটি এখনো টেনেটুনে নিচ্ছে বৃহত্তর এই সংগঠনকে।২৯১ সদস্যের নগর কমিটিতে নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় বেশির ভাগই বিবাহ করে সংসারী হয়েছেন। আবার তাঁদের অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। সংগঠনের কাজে সময় দেন না। এ কারণে সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
যদিও এগার বছর আগে এই কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ২০১১-২০১৫ মেয়াদের ওই কমিটির পর ২০১৫-২০১৮ মেয়াদে মো. সাইফুর রহমান সোহাগ সভাপতি ও এস এম জাকির হোসাইন সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৮-১৯ মেয়াদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সভাপতি ও মো. গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তারপরে আল নহিয়ান খান জয় সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সর্বশেষ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান আসলেও সেই আগের অবস্থানে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। কোন পরিবর্তনের সুবাতাস নেই।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘নগর সম্মেলন করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা সম্মেলন করতে পারব। ’
মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল বলেন, ‘নগর ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথাও নেই। আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছি। বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির অন্তত ৭০ শতাংশ বিবাহিত। এ বিষয়ে জানতে সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটির আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকে ছাত্রনেতারা জানিয়েছেন। বিশ্বস্ত সুত্র বলছে, শীর্ষ পদ-প্রত্যাশীদের শিগগিরই বায়োডাটা আহ্বান করবে কেন্দ্র । দীর্ঘদিন এক দশক পর নগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের আভাস তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।
নতুন কমিটি গঠনের আভাস ছড়িয়ে পড়ায় নিজেকে শীর্ষপদে এগিয়ে রাখতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে। অনেকেই চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপি এবং মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রতিনিয়তই যোগাযোগ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে শীর্ষপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন ৩৬ জন ছাত্রলীগ নেতা।
মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষপদে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা : মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ নুরুন্নবী সাহেদ, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য মোশাররফ চৌধুরী পাভেল, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দীন মামুন, আনোয়ার পলাশ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম, ডাবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দার, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস সৈয়দ ইবনে জামান ডায়মন্ড, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল আলম আলভি, ওমরগণি এমইস কলেজ ছাত্রলীগের জাহিদুল ইসলাম প্রমি, শাহাদাত হোসেন হীরা, মহিম আজম, মুহাম্মদ ইমন হেসেন, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য মিজানুর রহমান, আরাফাত রুবেল, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফখরুল রুবেল, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের (নৈশ) ভিপি মুহাম্মদ তাসিন, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নৈশ শাখার আহ্বায়ক আশীর্ষ সরকার নয়ন, পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান হাবীব সেতু, হালিশহর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রহিম জিসান, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ কাইয়ুম, মহানগর ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদ ফাহাদ আনিস, হুমায়ুন কবির আজাদ, মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ওসমান গণি, কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ইরশাদুল আমিন মিয়া জাহিদ, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব, সাধারণ সম্পাদক মীর মুহাম্মদ ইমতিয়াজ, ডবলমুরিং ছাত্রলীগ সংগঠনিক সম্পাদক শেখ তৌহিদুল ইসলাম আরদিন, ইসলামিয়া কলেজের এজিএস নোমান সাইফ, মহানগর ছাত্রলীগের উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রাশেদ চৌধুরী, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ইয়াসিন আরফাত বাপ্পি, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা অনিন্দ্য দেব, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য ফাহাদ আনিছ, মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক অরভিন সাকিব ইভান, মহানগর ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক এস এম হুমায়ূন কবির আজাদ, ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ ফারুক।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ জনের আংশিক নগর ছাত্রলীগের কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল।
এরপর ২০১৪ সালের ১১ জুলাই আগের ২৪ জনসহ ২৯১ সদস্যের ঢাউস সাইজের নগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ওই কমিটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post