একথা নিশ্চিত যে, লাবনী আক্তার ও মাহামুদুল হাসানের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা ছিল। পরিবারে থাকলে এর লক্ষণ কেউ না কেউ দেখতে পেতেন। পুলিশে যদি তেমন ব্যবস্থা থাকতো তবে দুটি প্রাণের এমন পরিনতি নিশ্চয়ই হতো না।
খুলনা মেট্রোপলিটান পুলিশের আতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোন্দকার লাবনী আ্ক্তার তার ঔড়না গলায় বেঁধে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। কেন করেছেন কি জন্য করেছেন তার সব কারনই সবার হয়তো বা জানা। এনিয়ে কিছু লিখতে চায় না।
লিখতে চায় পুলিশের প্রশিক্ষণ নিয়ে। পুলিশের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় যে গলদ আছে তা লাবনীর আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে জাহির হয়েছে। আত্মহত্যার ধরনে অজপাড়া গায়ের একজন অশিক্ষিত মহিলা এবং লাবনীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
ওই সব মহিলাদের বেশিরভাগের জীবন অন্যের উপর নির্ভরশীল। স্বামী শ্বশুর শাশুড়ী দেবর ননদ কিংবা অন্য কারো অত্যাচারে তারা নিজেকে বেচারা ভেবে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
লাবনী তো নিজেকে অসহায় বা বেচারা ভাবার পর্যায়ের নয়। তিনি লেখাপড়ায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। হাজারো প্রতিযোগীতাকে জয় করে পুলিশ অফিসার হয়েছেন। চাকরী জীবনে নিয়েছেন নানা ধরনের প্রশিক্ষণ। সেই প্রশিক্ষণ তাকে ইমোশনাল নারী থেকে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা বানাতে পারেনি এটা মানা যায়না।
তিনি দুই সন্তানের জননী। তার স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক। তার সাথে লাবনীর অমিল বিশ্বাস অবিশ্বাস মানসিক যুদ্ধ থাকতেই পারে। এ পরিস্থিতি এড়াতে আত্মহত্যা ছাড়া কোন পথ খোলাছিল না একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সংকট উত্তরণের জন্য আত্মহত্যা না করে অন্য অনেক ধরনের উপায় অবলম্বন করা যেত। তিনি সেই রকম সুষ্ঠু চিন্তা করার মতো অবস্থানে ছিলেন না এটাও মানা যায় না।
আবার ৩৯ বছরের একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা ২৫/২৬ বছর বয়সী একজন অধিনস্ত কনস্টেবলের সাথে কিশোর প্রেম (টিন এজ প্রেম) করবেন তা হতে পারেনা। দেহরক্ষী কনস্টেবল তার ইমোশনাল মুহুর্তের কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে একজন এডিশনাল এসপির মনের বাসিন্দা হতে পারেন তাও স্বাভাবিক নয়। তবে ওই কনস্টেবলের বোন বলেছেন তার ভাইয়ের সাথে লাবনীর সম্পর্ক ছিল ভাই বোনের মতো। সিম্পল ভাই-বোনের সম্পর্কের একজন আত্মহত্যার পর অন্যজন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিবেন এমনটিও হতে পারেনা। আবার একজন কনস্টেবল নিজ প্রচেষ্টায় খুলনা মেট্রো থেকে খুলনা রেঞ্জ পুলিশে এসে নিজের পছন্দ মতো পোস্টিং নিয়ে মাগুরায় আসবেন এটা পুলিশের কেউ বিশ্বাস করবেন না। লাবনী আক্তারের স্বামী ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছেন আর উনি ছুটি কাটাতে বাড়িতে এসেছেন তার মধ্যে যথেষ্ঠ প্রশ্ন থেকে যায় বৈ কি।
লাবনীর খবর শুনে কনস্টেবল মাহামুদুল নাকি মাহামুদুলের খবর শুনে লাবনী আত্মহত্যা করেছেন তা জানার পথ আপাতত নেই। আত্মহত্যার আগে তারা কার সাথে কখন কথা বলেছিলেন তার প্রমান হয়তো কল লিস্টে মিলবে। তবে একথা নিশ্চিত যে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাবনী আক্তার ও কনস্টেবল মাহামুদুল হাসানের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা কাজ করছিল। তারা পরিবারে থাকলে এর কোন না কোন লক্ষণ কেউ না কেউ দেখতে পেতেন। পুলিশ বাহিনীতে যদি এমন কোন ব্যবস্থা থাকতো তবে এই দুটি প্রাণ এভাবে ঝরে যেতে পারতো না্।
পরিশেষে বলা যায়, যার হাতে অন্য মানুষের জীবন হানি করার মতো ক্ষমতা বা হাতিয়ার বা সুযোগ থাকে তাদের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। উন্নত দেশ গুলোতে এই ব্যাবস্থা আছে। বাংলাদেশে কেবলমাত্র বিমানের পাইলট ব্যাতিত আর কারো মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুলাই ২২, ২০২২//