পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলে বিরামহীন অতি বর্ষণে
সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে, দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক।
চাষাবাদের মৌসুমে প্রকৃতির বৈরীতায় কৃষকের উফশী আমন, গুটি
স্বর্না বীজতলা, শাক শবজি, অসময়ের তরমুজ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত
হয়েছে। জেলার উপকূলে প্রায় ৬ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কৃষি
অর্থনীতির কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত
কৃষকের এ তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের
পাশে দাড়ানোর উদ্দোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।
জানা যায়, ধার-দেনা করে ১২ বিঘা জমিতে আবাদের জন্য গুটি স্বর্ণা জাতের
ধানের বীজতলা করেছিলেন কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের
কৃষক হেদায়েত আলী হাওলাদার (৬৫)। বিরামহীন ভারি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায়
তার বীজতলাটি নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ চারা পঁচে শ্যাওলা ধরে গেছে। এক শতক
জমিতেও রোপনের সুযোগ নেই। এতে তার অন্তত: কুড়ি হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আবার কীভাবে বীজধান কিনে নতুন বীজতলা করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।
চরম হতাশায় পড়েছেন একই ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের কৃষক ইয়াসিন আলী।
বৃষ্টির আগেই ১০ বিঘা জমিতে আমন চারা রোপন করেছিলেন তিনি। সদ্য রোপন করা
চারাসহ ক্ষেতটি পানিতে ডুবেছিল প্রায় এক সপ্তাহ। এখন অধিকাংশ চারায় পঁচন
ধরেছে। পানি-কাঁদার সঙ্গে লেপটে গেছে আমন চারা। এ বর্গাচাষী এখন দিশেহারা
হয়ে পড়েছেন। কীভাবে ফের চারা সংগ্রহ করবেন তা ভেবে তার রাতের ঘুম হারাম
হয়ে গেছে। এভাবে কলাপাড়া উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের শতকরা ৮০ ভাগ কৃষকের আমন
বীজতলা ও সদ্য রোপন করা আমন চারা নষ্ট হয়ে গেছে।
কুমিরমারা গ্রামের কৃষক সুলতান গাজী জানান, বীজতলা নষ্ট হয়ে গেলেও নতুন
করে বীজতলা করার মতো বীজধান নেই অধিকাংশ কৃষকের। ধান কেনার মতো সঙ্গতিও
নেই বলে তাদের দাবি। এছাড়া ক্ষেতে জমানো পানি যতটুকু নামে তা আবার
স্লুইসের গেট ভাঙ্গা থাকায় জোয়ারের সময় নদীর পানি ভিতরে প্রবেশ করছে। ফের
আমন আবাদ নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, বৃষ্টির জমানো পানিতে
কৃষকের ব্রি-৫১, ৫২,৭৬ জাতের ধানের বীজতলা বেশি ক্ষতি হয়েছে। বাকিসব কম
ক্ষতি হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে চূড়ান্তভাবে ক্ষয়ক্ষতি
নির্ধারণ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নজরুল ইসলাম বলেন,
’জেলায় ৫৭০০ কৃষক অতিবর্ষনে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলার
১২৯৭ হেক্টর আমন বীজতলার মধ্যে ৬০ হেক্টর আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,
১৪৮০০ আমন ক্ষেতের মধ্যে ২৫ হেক্টর, ৫১০০ হেক্টর শাক সবজি ক্ষেতের মধ্যে
৪০ হেক্টর এবং ১২৫ হেক্টর অসময়ের তরমুজ ক্ষেতের মধ্যে ০.৫ হেক্টর ক্ষেত
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে টাকার অংকে ৯৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।’
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ’আমি নিজের উদ্দোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য ধান
গবেষনা ইনষ্টিটিউটের কাছে ১ টন বীজ চেয়েছি। তারা আমাদের দেয়ার ব্যাপারে
আশ্বস্ত করেছে। এটি পেলে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে অন্তত: ৫০০ ক্ষতিগ্রস্ত
কৃষককে ২ কেজি করে বীজ বিনামূল্যে দিতে পারবো।’
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//