রমজানে বিকেল থেকেই শুরু হয় ঘরমুখো মানুষের ভীড়। সেই ভীড় সামলাতে নিরলস কাজ করে যায় পুলিশ। ট্রাফিক ও থানা পুলিশ চৈত্রের এই কাঠফাটা রোদে সারাদিন রোজা রাখার পরও তাদের জোটে না মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর ইফতার। নিজের নামে বরাদ্দ আসা খেজুর, ছোলা, মুড়ির মতো কয়েকটি খাবারে ইফতার সেরে আবারও কাজে লেগে পড়তে হয় তাদের।
শুধু মানুষের নিরাপদে ঘরে ফেরা নয়, জনগণের যেকোনো বিপদেও সবার আগে ছুটে যায় পুলিশ। দেশমাতৃকার নিরাপত্তার জন্য দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই পালাক্রমে ডিউটি করেন পুলিশ সদস্যরা। সেজন্য রমজান মাসে ইফতারের মতো সেহরিও তাদের পথেই সারতে হয়।
এবারের রোজায় সেই পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের তত্বাবধানে পুলিশ সদস্যদের মাঝে প্রতিদিন সেহরি ও ইফতারির জন্য সাড়ে ৫ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। রাজধানীর বিলাবহুল রেস্টুরেন্ট থেকে আনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের মাঝে।
রোববার প্রথম রমজানের ইফতারের আগ মূহুর্তে রাজধানীর বিমানবন্দর সিগন্যালে গিয়ে দেখা যায়- অফিস ছুটির সময়ের যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন ট্রাফিক কনস্টেবল শফিক। এরই মধ্যে মাগরিবের আজান শুরু হয়ে গেল। শফিক তড়িঘড়ি ট্রাফিক বক্সে গিয়ে চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে ইফতার করলেন। শফিকের বাড়ি নেত্রকোণায়। গত ৬/৭ বছর ধরে সে রাজধানীর যানজট নিরসনে কাজ করছেন। প্রতি রমজানেই তিনি এভাবেই ইফতার সারেন। এবার বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করেছেন এ জন্য তিনি খুবিই খুশি হয়েছেন।
শুধু পুলিশ সদস্যরাই বসুন্ধরার ইফতার সামগ্রী পাচ্ছেন তা নয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদেও প্রতিদিন ৬০০ রোজাদারের জন্য ইফতার ও সেহেরি সরবরাহ দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। বেসরকারি চাকরিজীবী বোরহান উদ্দিন প্রথম রমজানের দিন বায়তুল মোকাররমে বসুন্ধরার দেওয়া ইফতার নিয়েছেন। তিনি বলেন, অফিস শেষে বাসায় গিয়ে ইফতার করতে চেয়েছিলাম। সময় সল্পতায় তা সম্ভব হয়নি। তাই ইফতারের আগ মূহুর্তে তড়িঘড়ি করে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঢুকে পড়ি। ভেবেছিলাম সেখানে নামমাত্র ইফতার করে নামাজ শেষে বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করবো। বসুন্ধরার পক্ষ থেকে এমন ইফতার দেওয়া হয়েছে যে, সব খাবার খেয়ে শেষ করতে পারিনি। পর্যাপ্ত পরিমাণের পাশাপাশি খাবারগুলো খুবই মানসম্মত ছিল। রোজাদারদের এভাবে আপ্যায়ন করায় বসুন্ধরাকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, দোয়া করি তারা আরও বেশি বেশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করুক।
ইফতার ও সেহরির সময় খাবার সরবরাহের জন্য রাজধানীর কয়েকটি অভিজাত ও স্বনামধন্য রেস্টুরেন্টকে দায়িত্ব দিয়েছে বসুন্ধরা। এর মধ্যে রয়েছে ‘ম্যাগপাই বাংলা ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট’, ‘রোস্টেড টুয়েন্টি ওয়ান’ ও ‘আইআর টেকনোলজিস অ্যান্ড সলুশন’। এর ম্যাগপাই বাংলা ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধীকারী সেলিম আহমেদ বলেন- খাবারের মান ও দামের কারণে আমাদের রেস্টুরেন্টে সাধারণত অভিজাত লোকেরাই আসেন। তবে এবার বসুন্ধরার অর্থায়নে প্রতিদিন আড়াই হাজার রোজাদারের জন্য খাবার সরবরাহ করছি আমরা।
এমন উদ্যোগ সম্পর্কে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ জানায়, মানবিক দিক বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইফতার ও সেহরি রোজাদারের জন্য উৎসব, আমরা সেই উৎসবে অংশ নিতে পেরে ধন্য মনে করছি। কর্মব্যস্ততায় ইফতার ও সেহরি নিয়ে যাতে মানুষ বেকায়দায় না পড়ে এজন্য সবারই এগিয়ে আসা উচিত।
এমন উদ্যোগ সম্পর্কে বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ জানায়, মানবিক দিক বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইফতার ও সেহরি হচ্ছে রোজাদারের জন্য উৎসব, আমরা সেই উৎসবে অংশ নিতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি। কর্মব্যস্ততায় ইফতার ও সেহরি নিয়ে যাতে মানুষ বেকায়দায় না পড়ে এজন্য সবারই এগিয়ে আসা উচিত।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//৪ এপ্রিল,২০২২//

Discussion about this post