গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চরমে। হাসপাতালে ১৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৫ জন।
প্রায় ৪ লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবায় নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও নানা কারণে অনেকেই এখানে থাকতে চান না।
এ অবস্থায় সব প্রতিকূলতা ও বঞ্চনা সত্ত্বেও গাংনীর হাড়িয়াদহ গ্রামের কৃতি সন্তান ডা. ফারুক হোসেন নিরলসভাবে রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দিনরাতের অধিকাংশ সময় হাসপাতালেই রোগী দেখেন, যাতে চিকিৎসা ব্যাহত না হয় এবং রোগীদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব পায়।
তবে সম্প্রতি কয়েকজন ক্লিনিক মালিক, দালাল ও স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে- কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠানোর জন্য তাকে বিভিন্ন প্রলোভন ও চাপ দেওয়া হলেও তিনি সব উপেক্ষা করে মানবসেবার ব্রত নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।
গাংনীর চৌগাছা গ্রামের রহিদুলের স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন বলেন, সম্প্রতি আমার স্বামী গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন ডা. ফারুক হোসেন ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তিনি নিজেই ব্যবস্থা করে দেন। না হলে মেহেরপুর যেতে হতো।
মালসাদহ গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, গাংনী হাসপাতালের চিকিৎসকদের সব সময় পাই না, কিন্তু ডা. ফারুক স্থানীয় মানুষ হিসেবে সব সময় আমাদের পাশে থাকেন। তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি গাংনীর মানুষের জন্য আশীর্বাদ।
জানা গেছে, চিকিৎসক সংকটের কারণে ডা. ফারুক হোসেনকে কখনও কখনও ২৪ ঘণ্টা ডিউটি দিতে হয়। সপ্তাহে চার দিন পর্যন্ত ইনডোর, আউটডোর, রাউন্ড ও জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
নানা অপপ্রচারে স্থানীয় সচেতন মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ডা. ফারুক সব সময় মনোযোগ দিয়ে রোগীর কথা শোনেন, সঠিক চিকিৎসা দেন এবং কাউকে জোর করে প্রাইভেট ভিজিটে পাঠান না।
তিনি গরিব, অসহায়, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। নিজের এলাকায়ও নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।
ডা. ফারুক হোসেন বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের কথায় কর্ণপাত করি না। সেবার ব্রত নিয়েই এই পেশায় এসেছি, মানুষের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমাকে চাপ দিয়ে কেউ অনৈতিক সুবিধা নিতে পারবে না।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ-আল-আজিজ বলেন, চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা সাধ্য অনুযায়ী সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। চার লাখ মানুষের জন্য মাত্র কয়েকজন চিকিৎসক কাজ করছেন- এটা সত্যিই কঠিন, তবুও আমরা সেবার মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি।

Discussion about this post