মো. নজরুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে একের পর এক স্থাপন করা হচ্ছে ইটেরভাটা। ইটভাটা স্থাপন ও নিয়ন্ত্রন আইনের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছা মাফিক চলছে এসব ভাটায় ইট প্রস্তুতের কাজ। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় অবাধে পুড়ছে কাঠ। কালো ধূঁয়ায় শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা ভূগছে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ নানা প্রকার রোগব্যাধীতে। বিপন্ন হচ্ছে হাওরের পরিবেশ।জমির উপরি ভাগের পলি কেটে নেওয়ায় উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে ফসলী জমি। হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র।
এলাকাবাসীর অভিযোগ-প্রশাসনের কোন উদ্যোগ বা তদারকি না থাকায় নির্বিঘ্নে পরিবেশ দূষণ করে চলছে এ অবৈধ ইটভাটা।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের পাশ ঘেঁষে মেঘনার তীরে গড়ে উঠা জোনাকী ইটভাটায় চলছে ইট তৈরির কাজ। চোখে পড়ে স্তুপ করে রাখা গাছের গুড়ি ও ঢালের সাড়ি। যেগুলো ব্যবহার করে পোড়ানো হচ্ছে ইট, কালো ধূঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়-জাহের মিয়া, জালাল মিয়া ও আমির আলী গং যৌথভাবে ২০০৯ সাল থেকে চালাচ্ছেন এ ইটভাটা। কথা হয় জাহের মিয়ার সাথে। ইটভাটা মালিক সমিতির বরাত দিয়ে তিনি বলেন- সমিতির নির্দেশে তারা ইটভাটা চালাচ্ছেন। তবে নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন অনুমোদন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তবে সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছেন বলে দাবী এ ভাটা মালিকের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- এ ইটভাটার একাংশের মালিক জালাল মিয়া জেলার বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর গ্রামে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ভাই-বোন নামের একটি ইটের ভাটার নাম বদল করে বিএইচবি নাম দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে ইট প্রস্তুত করে যাচ্ছেন। এখানেও কর্তৃপক্ষের কোনরূপ অনুমোদন ছাড়াই সমিতির দোহাই দিয়ে ইট প্রস্তুত করে যাচ্ছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইটভাটায় আমাদের পরিবেশ মারাতœকভাবে দূষিত হচ্ছে। আমরা তা বন্ধে অনেক প্রতিবাদ করেছি, লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা চালাচ্ছে মালিকপক্ষ। বরং ইটভাটা বন্ধের প্রতিবাদ করায় নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা দিয়ে অনেককে হয়রানি করেছেন প্রভাবশালী মালিকপক্ষ।
তাছাড়া এ এলাকায় রাস্তার পাশ ঘেঁষে ফসলের মাঠে স্থাপন করা হয়েছে এটিবি ও আয়েশা নামে আরও দুটি ইটভাটা। এ ভাটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ট্রলি বোঝাই করে এনে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। ওই এলাকার কয়েকজন কৃষক জানান -ইটভাটার মালিক জমির উপরিভাগের উর্বর ও পলি মাটি কাটায় জমিতে ফসল উৎপাদন কমে গেছে। তাছাড়া ট্রলির মাটি রাস্তার উপর পড়ে থাকায় পাকা রাস্তায় ধূলার স্তুপ জমে আছে। গাড়ি চলাচলে ধুয়ার মত অন্ধকার হয়ে পুরু এলাকায় উড়ছে রাস্তার এ ধুলি। ফলে মারাত্নক দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছে ব্যস্ততম চাতলপাড়-অষ্টগ্রাম রাস্তার পথচারী, দুষিত হচ্ছে পরিবেশ।
এ বিষয়ে বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর এ.এম. মামুন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে এ প্রতিনিধি জানান- বিষয়টি আমার জানা ছিলনা, তবে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//