জে, জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: কবি বলেছিলেন, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। সত্যিই তাই। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা বিজ্ঞাপনের ব্যানার ও বিলবোর্ডের চেহারায় পাল্টে গেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে অবৈধ এসব বিলবোর্ড জুড়ে বাহারি বিজ্ঞাপনের ‘রঙীন ব্যানার’।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ্যাড এজেন্সি কোম্পানীগুলো কোন অনুমতি ছাড়াই উপজেলার মহাসড়ক জুড়ে এসব বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এর মধ্যে বৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা কতটি তা জানা না গেলেও অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা কিন্তু দুই দশকের ও উপরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু রাজনৈতিক বিলবোর্ড, সুজুকি, বিএসআরএম, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, কেওয়াই স্টিল, সজিব কর্পোরেশন এর মেক্স স্টপ ফায়ার, এস আলম সিমেন্ট, ডায়মন্ট সিমেন্ট, ইএসআরএম, কেএসআরমের সৌজন্য কিছু ট্রাফিক পুলিশের ব্যানার ও বিলবোর্ডে ছেয়ে রয়েছে।
সওজের জায়গায় এসব বিলবোর্ড বসানো হলেও ইহার নিয়ন্ত্রক কিন্তু অসাধু কিছু কর্মকর্তা আর প্রভাবশালী কতিপয় নেতা। কেননা, ভাড়া হতে যে টাকা আসে, তার একটি অংশ ঐ সমস্ত নেতা আর কর্মকর্তাদের পকেটে যায় বলে সবাই নীরব।
স্থানীয়রা বলছেন, তাঁদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসব অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসা বৈধভাবে চলছে। নাহয় বছরের পর বছর মাথার উপরে বিলবোর্ড ঝুঁলে থাকলেও প্রশাসনের অবস্থা দেখে মনেহচ্ছে যেন ‘দশ চক্রে ভগবান ভূত’।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, প্রতিটি সড়কের ডিভাইডার, মোড়, বাসার ছাদ, দেয়াল ও গাছসহ বিভিন্ন স্থানে ছোটবড় বিলবোর্ড বসানো হয়েছে।
যদিও লাখ লাখ টাকার এসব অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই। কর্ণফুলীর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘এভাবে ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগিয়ে উপজেলার সৌন্দর্য নষ্ট করা ঠিক নয়। অনেক বিলবোর্ড বিদ্যুৎ এর খুটির উপর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’
এসব প্রতিটি বিলবোর্ডের মূল্য বছরে ৩/৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানায়। সে হিসেবে শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর দক্ষিণ পাড় হতে শিকলবাহা ক্রসিং হয়ে ফকিরনিরহাট রাস্তার মাথা পর্যন্ত বহু বিলবোর্ডের মূল্য দাঁড়ায় অর্ধ কোটি টাকার কাছাকাছি।
এক্ষেত্রে প্রচলিত আইন হলো, যেকোনো ধরনের সরকারি-বেসরকারি জায়গায় বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন বোর্ড অথবা সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হলে নির্ধারিত ফি দিয়ে কতৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। এরপর স্থাপিত বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন বোর্ডের বিপরীতে প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্ধারিত হারে ভ্যাট ও কর দিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে এ আইন মানছে না। মানলে প্রতি বর্গফুট বিলবোর্ডে ৬০ টাকা করে ও ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আদায় করলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতে পারেন। কিন্তু কর্ণফুলী ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের কাউকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
শিকলবাহার ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিলবোর্ডের বিষয়ে উপজেলায় আলোচনা করেছি। শিগগরই এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘বিলবোর্ড সংশ্লিষ্ট আইন কানুন নীতিমালা দেখতে হবে। পাশাপাশি মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রশীদ বলেন,‘বিলবোর্ড গুলো আমাদের নজরে এসেছে। স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা চাইলে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে রাজস্ব আদায়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন। যাতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত না হয়।’
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘মহাসড়কে যে সব অবৈধ বিলবোর্ড ছাঁটানো হয়েছে সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজস্ব আদায়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//