মোঃ খায়রুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতাঃ বনের পাশে ইটভাটা। তাও আবার নিবন্ধনহীন। জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে স্থাপন করা এসব ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার কথা কয়লা। লোক দেখানো কিছু কয়লা ভাটার পাশে রেখে গোপনে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। এ রকম ৩২টি নিবন্ধনহীন ইটভাটা রয়েছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে। সব কয়টিতে পোড়ানো হয় কাঠ।
ইটভাটা মালিক সমিতির দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ৪৫টি। এর মধ্যে নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ১৩টির। অবৈধ ভাটার তালিকায় ৩২টি। আবার অধিকাংশ ভাটার নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। গত শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, ধলাপাড়া এলাকার সোনার বাংলা, বংশাই, ভাই ভাই ও আশিক ব্রিকস, রসুলপুর এলাকার সোনালি, সততা, আকাশ, তিতাস ও যমুনা ব্রিকস, দেউলাবাড়ি এলাকার এমএসএম ও আরএসএম, আনেহলা এলাকার মিশাল ও সিয়াম ব্রিকস, আন্দিপুর এলাকার কেআরবি, লোকেরপাড়ার কনক এবং দেওপাড়া এলাকার এমআরটি ব্রিকসে প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। একদিকে জ্বালানি কয়লার দাম বৃদ্ধি, অপরদিকে ভাটাগুলো বনের আশপাশে হওয়ায় সহজেই জুটছে কাঠ। ভাটা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি টন কয়লার দাম ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অপরদিকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে প্রতি টন কাঠ।
ইটভাটা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতিটি ভাটায় ইট পোড়াতে ২৪ ঘণ্টায় সাত থেকে আট টন কাঠের প্রয়োজন। এসব কাঠের অধিকাংশই আসে বন থেকে। অথচ জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ। এরপরও অবাধে চলছে এ কাজ। ঘাটাইলে মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। মূলত পাহাড়কে কেন্দ্র করে বন গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে সামাজিক ও সংরক্ষিত বনের প্রচুর গাছ। পাহাড়ি এলাকার লোকজন জানান, প্রতি রাতেই ট্রাক ভরে বনের কাঠ যায় ভাটায়। শনিবার দিনের বেলায়ই দেখা যায়, সোনালি ব্রিকসে কাঠ খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে একটি ট্রাক। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে বন।
জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো ভাটার মালিকরা। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো অধিকাংশ ভাটার দূরত্ব বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিস থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে। তবুও কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের। উল্টো তাঁর প্রশ্ন, আইনে আছে- বনের দুই কিলোমিটারের ভেতর ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না, তাহলে কীভাবে গড়ে উঠল এসব ভাটা? তবে কোনো ভাটায় কাঠ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ঘাটাইল ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান বলেন, বন ধ্বংস করে ইট পোড়ানো সমিতি সমর্থন করে না। এরই মধ্যে ভাটার মালিকদের ডেকে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে নিষেধ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় টাঙ্গাইল জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ধলার সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ওপর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সমিতির সভায়ও ভাটা মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালায় স্পস্ট বলা আছে, ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার বেআইনি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, আইন অনুযায়ী ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ। যেসব ভাটায় ইট পোড়াতে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিয়া চৌধুরী বলেন, ইটভাটায় কাঠ না পোড়ানোর জন্য নির্দেশনা রয়েছে। তা সত্ত্বেও সুনির্দিষ্ট কোনো ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য/এসএইচ//

Discussion about this post