মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবৈধ মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৫ মোবাইল কোট পরিচালনা করে ৫৮ মামলায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা অর্থদন্ড করেছেন। অবৈধ মাটি বহন করায় ৩৫ ড্রাম ট্রাক জব্দ করে উপজেলা পরিষদ চত্তরের সামনে মামলা ও অর্থদন্ডের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল (১২ এপ্রিল) শনিবার ও আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) জামুর্কি, মহেড়া, ফতেপুর, বানাইল, বহুরিয়া, ভাওড়া, মির্জাপুর পৌরসভা, গোড়াই, আজগানা, লতিফপুর, তরফপুর ও বাঁশতৈল এলাকায়সহ বেশ কয়েকটি স্পটে অভিযান চালিয়ে ৩৫ ড্রাম ট্রাক জব্দ এবং ১১ লাখ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রে এ বি এম আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও জানান, প্রশাসনের কঠোর নজরদারী এবং জেল জরিমানার পরও পাহাড়, নদী ও ফসলি জমি থেকে অবৈধ ভাবে মাটি চুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। দিনে ও রাতে ১৫-২০ টনের মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাক চলাচল করায় এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাটের যেমন ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশও হুমকির মুখে। অবৈধ মাটি ও বালি চুরি বন্ধে বন্ধে প্রতিনিয়তই মোবাইল পরিচালনা করা হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট আরও কঠোর ভাবে পরিচালনা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন
আজ রবিবার মির্জাপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এবং ভুক্তভোগিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কোদালিয়া, গোড়াইমইননগর, সৈয়দপুর ও গোড়াই পালপাড়া এলাকার আশপাাশে ভ্যেকু দিয়ে চলছে মাটি চুরির মহোৎসব। ৩০-৪০ টি ভ্যেকু চলছে এখানে। এছাড়া মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই, আজগানা, লতিফপুর, তরফপুর ও বাঁশতৈল এই পাঁচ ইউনিয়নে পাহাড়ি টিলার লাল মাটি অবৈধ ভাবে চুরি করে কেটে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
প্রকাশ্যে ও রাতের আধারে চলছে এ মাটি কাটার মহোৎসব। ফলে পাহাড়ি এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি এলাকার রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। একই ভাবে মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া ও বহুরিয়া ইউনিয়নের তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে চক্রটি। ফসিল জমির উপর ভ্যেকু ও নদীতে ড্রেজার বসিয়ে চলছে মাটি ও বালি চুরি। মাটি ও বালি ১৫-২০ টনের ড্রাম ট্রাক রাস্তার উপর দিয়ে নেওয়ার ফলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ড্রাম ট্রাক চলায় ধূলোবালিতে আশপাশের ঘরবাড়িতে বসবাস করা অনুপযোগি হয়ে উঠেছে।
এক দিকে পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে তেমনি সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। প্রভাবশালী মহল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ফসলি জমির উপর দিয়ে জোর পুর্বক রাস্তা নির্মান করে দিনে রাতে ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি বহন করছে। কোন কৃষক বাঁধা দিলে তাদের নানা ভাবে মামলা ও পুলিশের গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও ভুক্তভোগি পরিবারগুলো অভিযোগ করেন। ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি বহন করায় এলাকার ৩০-৩৫ টি গ্রামীণ রাস্তার বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে ১৫-২০ টি ছোট বড় ব্রিজ কালভার্ট।
এদিকে এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে মাটি চুরি বন্ধে অভিযানে নামেন এসিল্যান্ড মাসুদুরর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম, ওসি মো. মোশারফ হোসেনসহ মির্জাপুর সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যগন। গত তিন দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালিয়ে মাটি বহনের ৩৫ ড্রাম ট্রাক জব্দকরে ১১ লাখ টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রায় ৭০ লাখ টাকা অর্থদন্ড এবং ড্রাম ট্রাক ও ভ্যেকু জব্দ করেছেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম রিজন বলেন, অবৈধ মাটি কাটা ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে বহন করায় এলাকার পাকা রাস্তাঘাটের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি পাকা ব্রিজগুলো হুমকির মুখে পরেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্্িরকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম আরফিুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদুর রহমান বলেন, একটি চক্র পাহাড়ের লাল মাটি, নদী ও নদীর চর এবং ফসলির জমির মাটি ভ্যেকু ও ড্রেজার বসিয়ে কেটে নিচ্ছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) পর্যন্ত ৩৫ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫৮ মামলায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। মাটি বহনের ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়েছে ৩৫ টি। অবৈধ মাটি কাটা বন্ধে অভিযান আরও কঠোর ভাবে পরিচালনা করা হবে বলে এই দুই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
এম/দৈনিক দেশতথ্য//