এস কে দোয়েল : আদুরী আখতার আদি, ছোট্ট একটা নাম। সে করেছে অনেক বড় কাম। সে এখন মাসে আয় করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তাঁর চোখে এখন অনেক স্বপ্ন জমেছে। সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হাতের কাজের পাশাপাশি শিখেছে বিউটি পার্লারের কাজ। সে হতে চলেছে স্বাবলম্বী।
উত্তর বঙ্গের তেঁতুলিয়ায় আদির স্থায়ী নিবাস। আদুরী আকতার আদি জানান, এক দরিদ্র কৃষি পরিবারে তাঁর জন্ম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। স্বপ্ন ছিল নার্স হওয়ার। কিন্তু অর্থের অভাবে পড়তে পারিনি। অল্প বয়সেই বিয়ে সংসার। কিন্তু বিয়ে হল শিক্ষিত বেকারের সাথে। স্বামীর পড়ালেখা থাকলেও যোগ্যতা অনুযায়ী হয়নি কোন চাকরি। এর মধ্যে পরিবারে নতুন সদস্য হয়ে আসে এক কন্যা সন্তান। অভাব অনটনের সংসারে হাপিয়ে উঠি। ছয় বছর সংসার করার পর চলে আসি বাপের বাড়ি।
কি করবো, কী করে চলবে সংসার তা নিয়ে খুব ভাবছিলাম। ঠিক করলাম কিছু একটা করার। কী জানা আছে আমার। পড়ে মনে হলো একটা নার্সারি করতে পারি। ফুলের প্রতি খুব ভালোবাসা থাকায় মাত্র তিনশো টাকা দিয়ে নিজের চেষ্টায় গড়ে তুলি ফুলের নার্সারী। নার্সারির পরিচর্যা করতে করতেই ফুল আসে গাছগুলোতে। ফুল বিক্রি শুরু করি। ফুল বিক্রি করে প্রথমত ২ হাজার ২শ টাকা আয় হলো। পরে একজনের অনুপ্রেরণায় হাতের কাজ শিখে সে টাকা দিয়ে কাপড় কিনে হাতের কাজ করি। ধীরে ধীরে থ্রি পিস, চাদর, পাঞ্জাবির কাপড় কিনে হাতের কাজ করি। বানাই রুমাল।

প্রথমে অফলাইনে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে শুরু করি। বাড়তে থাকে ক্রেতা। এর মধ্যে ফেসবুকে আইডি খুলে হাতের কাজের তৈরি পণ্যগুলো পোস্ট দেই। এভাবেই বাড়তে থাকে ক্রেতা। ক্রেতাদের চাহিদা থাকায় আমার অনলাইনে অফলাইনে দুই খানেই পণ্য বিক্রি করে। এতে করে এখন প্রতি মাসে আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার। আমার অফলাইনে বেশি বিক্রি হয়। কুরিয়ার সার্ভিসেও পণ্য ডেলিভারি করে থাকি।
স্বামীকে একটি গাড়ি কিনে দেই। স্বামী এখন গাড়ি চালিয়ে বেশ ইনকাম করছে। ভাবছি স্বামীকে একটি হাই রেজুলেশনের ভিডিও ক্যামেরা কিনে দিব। এটা দিয়ে সে বিয়েবাড়িসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিডিও করবে। এ থেকেও আয় হবে। আর আমি বিউটি পার্লারের কাজ ও বাড়ি সাজানো, কনে সাজানোর কাজ শিখে ফেলেছি। এটি কাজে লাগাতে চাই।
নতুন উদোক্তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, তেতুলিয়ার মেয়েরা সফল হোক। আপনি যে কাজটি করতে পছন্দ করেন সেই কাজটিই করেন। যে কাজে আপনার ক্লান্তি আসেনা। আনন্দ পান। সে কাজটিই করেন। তাহলেই হতে পারবেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে আদি জানান, চাকরি নয়, নিজে সফল উদ্যোক্তা হতে চাই। সমাজের অবহেলিত মেয়েদের জন্য কিছু করতে চাই। যারা স্বামীর বাড়িতে কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। তাদের জন্য কিছু করতে চাই। তাদের আয়ের ব্যবস্থা করতে চাই। এ জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন দেখছি। তা গড়তে লাগে টাকা।
সরকার তো উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারি সহযোগিতা পেলে কাজের আরো গতি পাব। লাখপতি হতে চাইনা গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।