যশোরের ঝিকরগাছার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পাল্লা মোড়লপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত আছেন বীরপ্রতীক মো. আব্দুল জলিল। যিনি রকেট জলিল নামে খ্যাত। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে সাহসী এই যোদ্ধার কবর।
কবরটি বাঁশ দিয়ে ঘেরা; যার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। কবর সংরক্ষণে কিংবা পাকাকরণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বীরপ্রতীক মো. আব্দুল জলিল ওরফে রকেট জলিল ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, একাত্তরের রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন আব্দুল জলিল। একাত্তরে একই দিনে তিনি ৪-৫ জায়গায় অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অল্প সময়ে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার কারণে পাকিস্তানি বাহিনী ওই সময় বলতো, ‘রকেট হ্যায়, না কিয়া হ্যায়’। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৬ সালে আব্দুল জলিলকে ‘বীরপ্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের মনোরম একটি গ্রামের নাম পাল্লা। ১৯৪৬ সালে এই গ্রামের মহর আলী মোড়ল আর চেয়ারবানুর ঘরে জন্ম আব্দুল জলিলের। স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। ১৯৬৩ সালে তিনি মুজাহিদ কোম্পানিতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মুজাহিদ কোম্পানি থেকে কেউ সেনাবাহিনী, কেউ পুলিশ কিংবা ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগ দেন। আব্দুল জলিল ১৯৬৮ সালে ইপিআরে যোগ দেন সিপাহি পদে।
জুলাই মাসে ঝিকরগাছার গঙ্গাধরপুর-দোসতিনায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল জলিল। গুলিটি বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে বিদ্ধ হয়। ওই সময় নিহত হয় চার পাকসেনা। পরে ভারতের বনগাঁ হাসপাতাল থেকে গুলি বের করে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় নৌপথে চলে আসেন। ভারতে একরাত ছিলেন। কারণ তার অনুপস্থিতিতে সঙ্গীরা হতাশ হয়ে পড়েন।
ঝিকরগাছার বনমান্দার এলাকায় দ্বীপের মতো একটা আস্তানায় ছিল রাধানগর ক্যাম্প। চারপাশে পানি, নৌকায় যাতায়াত করতে হতো। অনেক অপারেশনে তিনি সরাসরি অংশ নেন।
১৯৯৬ সালে ‘বীরপ্রতীক’ পদকপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধার ‘বীরপ্রতীক ভাতা’ ও আড়াই বিঘা জমি থেকে পাওয়া ফসল থেকেই এখন সংসার চলছে।
জলিলের স্ত্রী হালিমা বেগম ও মোমেনা খাতুনের সঙ্গে। হালিমা বেগম বলেন, যুদ্ধের সময় আমার বড় ছেলে কোলে। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ছুটে গেছি রকেট ও তার সঙ্গীদের জন্য খাবার নিয়ে। পৌঁছে দিয়েছি অস্ত্র, গোলাবারুদ।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রায় তিন বছর হলো রকেট মারা গেছেন। কিন্তু তার কবর সংরক্ষণে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী বলেন, মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ কাজ পেয়েছে। এর আগে পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব কবর বাঁধাইকরণের জন্যে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলোর কাজ শুরু হবে। সেক্ষেত্রে শিগগিরই বীরপ্রতীক আব্দুল জলিলের কবর পাকাকরণের কাজ হবে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১০ ডিসেম্বর ২০২৩