তিন মাসের কাজ চার বছরেও শেষ না করে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ।জড়িত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিস
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অর্ধশতাধিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াশ ব্লক নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রকল্পের প্রায় সাত কোটি টাকা সিন্ডিকেট চক্র কারসাজি করে তিন মাসের কাজ চার বছরেও শেষ না করে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অংকের টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, এই অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং ঠিকাদার সিন্ডিকেট চক্র। ফলে বিপুল সংখ্যক কোমলমতি ক্ষুদে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকগন চরম বিপাকে পড়েছেন।
কাজ না করেই সিন্ডিকেট চক্র বিল উত্তোলনের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ভুয়া বিলে স্বাক্ষর করার জন্য নানা ভাবে চাপ ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং অসহায় শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন।
শনিবার (৮ জুলাই) উপজেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধিনে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রজেক্ট (পিইডিপি-৪) এর আওতায় ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পৌরসভা এবং ১৪ ইউনিয়নের ৫২ টি সরকারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টাঙ্গাইল জেলা ও মির্জাপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এই কাজের সার্বিক তদারকি করছেন। প্রতিটি ওয়াশ ব্লকের জন্য নির্মান ধরা প্রায় ১৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে ৫২ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মানের মোট ব্যয় ধরা প্রায় সাত কোটি টাকা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক ভাবে প্রভাব বিস্তার করে কয়েকটি প্যাকেজের মাধ্যমে ওয়াশ ব্লক নির্মানের কাজ ভাগিয়ে নেন মেসার্স মনির এসই-পিসি জবি এন্টার প্রাইজ, মেসার্স স্বপন এসই-পিসি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সাখাওয়াত হোসেন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সিরাজ এসএম এন্টারপ্রাইজ. মেসার্স আল ওহাব এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স আল ওয়াজেদ এন্টারপ্রাইজ। কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার পর এসব ঠিাকাদারী প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে নানা অজুহাতে ওয়াশ ব্লক ২০-৩০ ভাগ কাজ শেষ করে বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। অধিকাংশ ওয়াশ ব্লকের কাজ শেষ না হওয়ায় তা ব্যবহারের অনুপযোগি হওয়ায় বিপুল সংখ্যক কোমলমতি ক্ষুদে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মচারীগন চরম বিপাকে পরেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নওগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাওয়ারকুমারজানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুধিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খৈলসিন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন আদাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আউশাচালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাজেশ্বরী আলাউদ্দিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, থলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কদিমধল্যা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মান অসমাপ্ত রয়েছে। সিন্ডিকেট চক্রের নানা কারসাজিতে এসব ওয়াশ ব্লক নির্মান আজও হবে কিনা তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে ১০ জন প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করে বলেছেন, ঠিকাদারগন তিন মাসের কাজ গত চার বছরেও শেষ করেনি। কাজ শেষ না করে ঠিকাদারগন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বিল উত্তোলনের জন্য ভুয়া বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। ওয়াশ ব্লকের নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় কোমলমতি ক্ষুদে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকগন এর সুফল পাচ্ছে না। তারা আরও অভিযোগ করেছেন এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস এবং ঠিকাদার সিন্ডিকেট চক্র।
এ ব্যাপারে ঠিকাদরদের মধ্যে আল ওয়াজেদ এন্টারপ্রাইজের আল মামুন বলেন, আমরা যখন কাজ নিয়েছিলম তখন রড, সিমেন্টসহ অন্যান্য মালামালের দাম কম ছিল। এখন মালামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ওয়াশ ব্লকের তাই কাজ করা যাচ্ছে না। তারপরও কোন কোন ওয়াশ ব্লক ৭০-৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শরীফ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারগন ওয়াশ ব্লকের কাজ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছেন। কাজ করার জন্য তিনি ঠিকাদারগনকে অনুরোধ করেছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. বাহার উদ্দিন বলেন, কয়েকটি প্যাকেজের মাধ্যমে ঠিকাদারগন কাজ করছেন। মালামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ করতে ঠিকাদারগন বিলম্ব করছেন। কাজ শেষ করার জন্য তিনি ঠিকাদারদের নানা ভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
দৈনিক দেশতথ্য// এইচ//

Discussion about this post