Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 5:33 pm

আউশের ভালো ফলন ও দামে বেজায় খুশি চাষিরা

রাশেদুজ্জামান, নওগাঁ: নওগাঁয় গত বোরো মৌসুমে বৈরি আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন চাষিরা। ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে মাঠেই নষ্ট হয়েছে ধান। এবার আউশের ফলনে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন চাষিরা। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় নওগাঁয় আউশের ভালো ফলন হয়েছে। জেলার বেশির ভাগ এলাকায় এখন চলছে আউশ ধান কাটা ও মাড়াই। বাজারে ধানের দামও ভালো। আউশের ভালো ফলন ও দামে বেজায় খুশি চাষিরা।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত আউশ ধান চাষের খরচ বোরো ধান চাষের চেয়ে অনেক কম। তবে এবার অনাবৃষ্টির কারণে আউশ ধানের খেতে সেচ দিতে হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় এবার খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতে পারছেন চাষিরা। আউশ ধান চাষে সরকারিভাবে সার ও বীজে প্রণোদনা দেওয়ায় অনেকে আউশ ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর কার্যালয় সূত্র জানায়, গত মৌসুমে জেলায় ৫১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল। এবার ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। চাষিরা জিরা, কাটারি, বিআর-২৬ ও ২১, ব্রি-২৮,-৫৬, ৬৫, ৮২ ও ৮৫, বিনা-১৯, পারিজা এবং হাইব্রিড হীরা জাতের ধানের চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, প্রতি হেক্টর জমিতে ৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন হিসাবে জেলায় এ বছর ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদিত ধান থেকে চাল উৎপাদিত হবে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
এবার জেলায় ১৬ হাজার ৫০০ কৃষককে আউশ চাষে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক কৃষক ৫ কেজি করে বীজধান, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার পেয়েছেন।
নওগাঁর সদর, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকতেই খেতের ধান পেকে গেছে। ধান কাটা, আঁটি বাঁধা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা। ভ্যান, ট্রলিসহ বিভিন্ন বাহনে করে কৃষকেরা খেত থেকে ধান তুলে বাড়ির খলিয়ানে মাড়াইয়ের কাজ করছেন। অনেকে পাকা সড়কের ওপর ধান মাড়াই করছেন।
গত শনিবার সকালে ১৮ জন শ্রমিক লাগিয়ে খেতের ধান কেটে নিচ্ছিলেন মহাদেবপুর উপজেলার আখড়াবাড়ি গ্রামের চাষি সাইদুর রহমান। খেতের আইলে দাঁড়িয়ে থেকে ধান কাটা পর্যবেক্ষণ করছিলেন তিনি। সাইদুর রহমান বলেন, এবার বোরো মৌসুমে যে সময় মাঠের ধান পাকতে শুরু করেছিল সে সময় থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সময় পর্যন্ত ঘন ঘন বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। ঝড়ে ধানের গাছ পড়ে যাওয়া ও পানিতে ডুবে খেতেই প্রায় ৩০ শতাংশ ধান পচে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ধান গাছ পড়ে যাওয়ায় ধান কাটতেও বেশি খরচ হয়েছে। সেই তুলনায় এবার আউশ ধান চাষই লাভজনক। অনাবৃষ্টি ছাড়া বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সেচের কারণে বাড়তি খরচ হলেও বাজারে ধানের ধান ভালো থাকায় সেই ক্ষতি পুষে যাচ্ছে।
মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল গ্রামের কৃষক মহেন্দ্র উঁড়াও বলেন, ‘এবার দেড় বিঘা (৩৩ শতকে বিঘা) জমিত জিরা ধান লাগাইছি (চাষ করেছে)। এর মধ্যে এক বিঘা জমিত ধান লাগানোর জন্য সরকারি বীজ ও সার প্যায়ছিনু। দেড় বিঘা খ্যাতের মধ্যে ১৬ শতক জমির ধান মাড়াই করে ১০ মণ ধান হইছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে চার মণ ধান বাজারত ব্যাঁচে (বিক্রি) দিছি। গত বছর বর্ষালি ইরি (আউশ ধান) ধানের দাম আছিল ৭০০-৮০০ টাকা মণ। সেই তুলনায় এবার ধানের দাম ম্যালা (অনেক) ভালো।’
সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের আউশ চাষি জিয়া উদ্দিন এবার দুই বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধানের চাষ করেছেন। এক বিঘা জমির ধান মাড়াই করে ১৮ মণ ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আউশ ধানে খরচ বোরো ধানের প্রায় অর্ধেক। এবার বর্ষায় বৃষ্টি কম হওয়ায় আমন চাষের জন্য একটু সমস্যা হলেও আউশ ধানের জন্য ভালো হইছে। অনাবৃষ্টির কারণে খেতে দুই-একবার সেচ দেওয়া লাগলেও ধানের ফলন এবার ভালো হয়েছে। বাজারে ব্রি-২৮ ধান ১১০০ থেকে ১১৩০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বোরো ধানে যে ক্ষতি হয়েছিল, আউশ চাষে সেই ক্ষতি কিছুটা হলেও পোষানো যাবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমের শেষ দিকে একটানা বৃষ্টির কারণে নওগাঁয় খেতেই অনেক ধান নষ্ট হয়েছিল। এতে কৃষকেরা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে এবার যে সব কৃষক আউশ ধান আবাদ করেছেন তাঁরা বেশ লাভবান হয়েছেন। সাড়ে ৫০০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে এর মধ্যে কৃষি বিভাগ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ কৃষককের প্রত্যেককে এক বিঘা জমির জন্য বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক সময়ে আউশ ধান রোপণ ও বপনের কাজ করায় আউশ ধানের খুব ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬-৭ শতাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, বৈরি আবহাওয়া না হলে আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমির ধান ভালোভাবে কৃষকের ঘরে উঠে আসবে।’

দৈনিক দেশতথ্য//এল//