লিফট অপারেটর ডিউটি রেখে ছিলেন রাজশাহীতে। থানা ও ৯৯৯ কল দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোক আনিয়ে রক্ষা পেলেন তারা
টানা প্রায় ৪২ মিনিট লিফটের মধ্যে আটকে থাকলেন পিপি-পুলিশ-আসামিসহ ১২ জন। শেষ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে লিফট খুলে ১২ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন। কুষ্টিয়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে রবিবার বেলা ১১ টায় শ্বাস রুদ্ধকর এ ঘটনা ঘটে। লিফটের মধ্যে আটকে থাকা ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন কুষ্টিয়া জজ কোর্টের নারী ও শিশু আদালতের সরকারি কৌশুলী (পিপি) আব্দুল হালিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বেলা ১১ টার দিকে তিনিসহ ১২ জন কুষ্টিয়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের লিফটে ওঠেন। ওপরে যাওয়ার জন্য লিফটের বাটন টেপার পর লিফটে ওপরে ওঠা শুরু করে। কিন্তু দুই-এক সেকেন্ডের মধ্যেই লিফট বিকল হয়ে পড়ে।
এ সময় লিফটের মধ্যে কোন লিফটম্যান বা অপারেটর ছিল না। তাঁরা লিফটের বাটন টিপে লিফট খোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না এবং লিফট খুলছিলনা। এ অবস্থায় তাঁরা সবাই লিফটের মধ্যে আটকে পড়েন। এ সময় ১৩ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ওই লিফটে ৪ জন আইনজীবী, একজন আসামিসহ দু জন পুলিশ সদস্য, দুই জন নারীসহ ১২ জন ছিলেন। পিপি আব্দুল হালিম জানান, লিফট না খোলায় তাঁরা প্রথমে লিফটের গায়ে থাকা লিফটম্যান বা অপারেটরের মোবাইল নাম্বারে ফোন করেন। লিফটম্যান তাদেরকে জানান, তিনি কুষ্টিয়ায়াতে নেই। বর্তমানে রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে তাঁরা কুষ্টিয়া মডেল থানা এবং জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করেন।
লিফটে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা আব্দুল হালিম বলেন, দীর্ঘক্ষণ লিফট না খোলায় আমরা সবাই আতংকিত হয়ে পড়ি। অনেকেই দোয়া-দরুদ পড়তে থাকেন। ভয় হচ্ছিলো লিফট ছিঁড়ে নিচে পড়ে যায় কিনা। আবার অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যায় কিনা এই আশংকায়ও ভুগছিলাম।
খবর পেয়ে কুষ্টিয়া ফায়ার ষ্টেশনের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার খোরশেদ আনোয়ারের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। উদ্ধার অভিযান প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া ফায়ার ষ্টেশনের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার খোরশেদ আনোয়ার জানান, ১১ টা ২৫ মিনিটের সময় তাঁরা এ দুর্ঘটনার খবর পান। বেলা সাড়ে ১১ টার সময় তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।
তিনি জানান, প্রথমে লিফটের চাবি নিয়ে লিফট খোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোন ভাবেই লিফট খোলা সম্ভব না হওয়া তাঁরা শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে থাকা স্প্রেডার মেশিনের সাহায্যে লিফট খুলে আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
গোটা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায় ১২ মিনিটের মত সময় লাগে। কি কারণে লিফট আটকে গেলে এ বিষয়ে তাঁর সঠিক কোন ধারণা নেই বলে উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, আটকে পড়াদের বেশ কয়েকজন এবং আইনজীবীসহ অনেকেই তাদেরকে জানিয়েছেন এই লিফট ঠিক মত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়না। প্রায় লিফট আটকে যায় এবং নামার সময় লিফট কাঁপতে থাকে।
জানা যায়, চীফ জুডিশিয়াল আদালত ভবনের দুটি লিফটের মধ্যে একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। একটি মাত্র লিফট সচল থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই লিফট বিকল হয়ে যায়। কোর্টের আইনজীবীদের দাবি অবিলম্বে আদালতের বিকল হয়ে পড়ে থাকা লিফটি দ্রুত সচল করার পাশাপাশি সচল লিফটটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় যে কোন সময় একমাত্র সচল লিফটটি আবারও বিকল হয়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে কুষ্টিয়া কোর্টের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনায় কোন-ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিষয়টি বিজ্ঞ আদালতকে জানানো হবে। প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ কুষ্টিয়া চীফ জুডিশিয়াল আদালত ভবনের উদ্বোধন করা হয়।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//অক্টোবর ২৪,২০২২//