Print Date & Time : 22 April 2025 Tuesday 9:53 pm

আপডেট কুষ্টিয়া’র আয়োজিত ঐইতিহ্যবাহী লাঠি খেলার সমাপ্তি

ঢাক-ঢোল আর খঞ্জনির তালে তালে লাঠির আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, আত্মরক্ষার নানান ভঙ্গিমা ও নৃত্য প্রদর্শন করে একদল খেলোয়াড়। টান টান উত্তেজনাপূর্ণ এ খেলা উপভোগ করতে ভিড় জমান শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ। আবহমানকাল থেকে চলে আসা এই খেলাটির নাম লাঠি খেলা। তবে কোথাও কোথাও আঞ্চলিক ভাষায় একে  লাড়কি খেলাও বলা হয়। সাধারণত আশ্বিন-কার্তিক মাসে ধান কাঁটার আগে পূর্ণিমা রাতে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

 বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের এইতিহ্যবাহী ও সুস্থ ধারার বিনোদনের খোরাক এই খেলাটি এখন বিলুপ্ত প্রায়।  কিন্তু বিলুপ্ত প্রায় এই খেলাকে পুনরুদ্ধার করতে ও সমাজের মানুষকে সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে প্রতি বছর লাঠি খেলার আয়োজন করেন কুষ্টিয়ার জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক অর্পন মাহমুদ। তিনি বহুল প্রচলিত দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আপডেট কুষ্টিয়া’র চিফ অব এডমিন। তাঁর সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন ও  আপডেট কুষ্টিয়া’র আয়োজনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট গ্রামে পঞ্চম বারের মতো  ৩ দিন ব্যাপী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলাটি মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১০ টায় শেষ হয়। খেলাটি পরিচালনা করেন ওস্তাদ জানার আলী ও ঢুলি রাজা। এই খেলায় কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর সহ কয়েকটি জেলার লাঠিয়ালরা অংশ গ্রহণ করেন। এবারের খেলায় মিডিয়া পার্টনার ছিলো সাপ্তাহিক পথিকৃৎ ও দৈনিক খবরওয়ালা পত্রিকা। খেলার শেষে খাসি ছাগল জবাই করে খেলোয়াড় ও অতিথিদের কলার পাতায় আপ্যায়ন করা হয়। যা খেলোয়াড় ও অতিথিদের বাংলার বিলুপ্ত স্মৃতির কথা স্মরণ করিয়ে বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করে। লাঠিখেলা সম্পূর্ণ শালীন এবং সামাজিক হওয়ায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল বয়সের লোকজন উপভোগ করেন। এছাড়াও বটতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে লাঠিখেলা উপভোগ করেন।

উপস্থিত দর্শকরা জানান, লাঠিখেলা খুবই বিনোদন মুখর এবং সামাজিক গুরুত্ব বহনকারী একটি খেলা। আমরা পরিবারের সবাই একসাথে খেলাটি উপভোগ করি। তাছাড়া  এ জাতীয় সুস্থ ধারার বিনোদন আমাদের তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও অনলাইন গেমের কড়াল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও  দর্শকরা লাঠিখেলার পুনরায় আয়োজন করতে আয়োজক অর্পণ মাহমুদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

আয়োজক  অর্পণ মাহমুদ জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই লাঠিখেলা একটি সুস্থ ধারার বিনোদন। যা সমাজকে মাদক, জঙ্গিবাদ ও অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় গ্রামীণ মানুষদের নিয়ে ৫ বছর ধরে লাঠি খেলার আয়োজন করে আসছি। প্রতি বছর তিন দিনের এই খেলা দেখতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় করেন। ফলে খেলার মাঠ হয়ে উঠে এলাকার মানুষের এক মহামিলন মেলা।

 লাঠিয়ালরা জানান, তাঁরা প্রায় ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় লাঠি খেলা করছেন। খেলোয়াড়দের বেশিরভাগ গরীব। তাঁরা দৈন্য দশায় জীবনযাপন করেও লাঠির কলাকৌশলে বিনা পারিশ্রমিকে মানুষকে বিনোদন দেন। মূলত খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক না থাকার কারণেই খেলাটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। খেলাটি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগের প্রয়োজন বলে  মন্তব্য করেন তাঁরা।

খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৮ অক্টোবর  ২০২৩