Print Date & Time : 2 May 2025 Friday 3:53 pm

আবরারের হত্যকারীদের ফাঁসি দাবিতে র‌্যালি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকান্ডের দুই বছর আজ। আবরারের হত্যকারীদের সকলের ফাঁশি দ্রত দাবি করেছে আবরারের বাবা, মা, ভাই, দাদা, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠীসহ স্থানীয়রা।

বৃহ:বার সকাল আটটার দিকে গ্রামের বাড়ি থেকে কবর স্থান প্রর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে শোক র‍্যালি করেছে তার গ্রামের বাসিন্দারা।

র‍্যালি শেষে আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করে র‌্যালীতে আংশগ্রহনকারী সকলে। এ সময় আবরারের দাদা আব্দুল গফুর বিশ্বাস, ফুপাতো ভাই শাহিনুর আলম, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বিকালে কবর জিয়ারত করতে আসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। সেময় তারা আবরারের পরিবারের সাথেও দেখা করেন। সেসময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও আবরারের কবর জিয়ারত করা হয়েছে।

এছাড়াও সন্ধায় ছেলের কবর জিয়ারত করেন আবরারের বাবা সহ পরিবারের স্বজনরা।

স্থানীয়রা বলছেন, আবরার হত্যাকান্ডের দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। শুরুতে ব্যাপক আন্দোলনের মুখে আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রত বিচারের কথা বলা হলেও বিচারে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও সাম্প্রতিক ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

জানা গেছে করোনাতে বিচারকাজ বন্ধ থাকলেও বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে, চলতি মাসের ২০ তারিখে মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হবে।

আবরারের দাদা আব্দুল গফুর বিশ্বাস বলেন, আমার বয়স ৯০ বছর। মৃত্যুর আগে আমি আমার নাতি আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদন্ড কার্যকর দেখে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ সবাই বলেছেন আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শান্তি ফাঁসি দেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো বিচার কাজ শেষ হয়নি। মরার আগে অন্তত্য নাতি হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।

অপর দিকে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আবরার হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত আসামী রাব্বি তানিম, মুজতবা রাফিদ ও জিসান এখনও তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। সেসময় তিনি তাদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানান এবং সকল আসামীদের মৃত্যুদন্ড দাবি করেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে আবরার ফাহাদের নামফলক( হলের নাম বা স্তম্ভ) সহ একটি স্মৃতি রাখার আহবানও জানান, যেনো ২০ বছর পরও ওই নামফলকের মাধ্যমে সবাই আবরারকে মনে রাখে।

আবরারের মা রোকেয়া খাতুনের সাথে যোগাযযোগ করা হলে দেখা যায় বড় ছেলে হারানোর শোকে অনেকটাই স্তভÍ। তিনি জানান, আমার আবরার কোনদিও জোরে কথাও বলতোনা, আমাকেও কখনও জোরেরস্বরে ডাকেনি। আজ যদি আমার ছেলে উশৃঙ্খল হতো তাহলে না হয় মনের কাছে বুঝ দিতে পারতাম । কিন্তু ওরা আমার সোনার মতো ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এই ব্যাথা আমি মা হয়ে কি করে সয্য করবো । আমার আবরার তো ওদের কোন ক্ষতি করেনি তাহলে কেনো ওরা আমার আবরার কে পিটিয়ে এভাবে হত্যা করলো আমাকে সন্তানহারা করলো ! সেময় এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের অবতারন হয়।

অপরদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে নেটিজেনরা ব্যথিত মনে পড়েছে সেটি। স্টাটাসটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পরিশেষে তিনি জানান, আমার ভাইয়ার জন্য দোয়া করবেন। অনেকভাবে অনেকেই ভাইয়াকে স্মরণ করে থাকেন। তাদের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। আমাদের সকলের কাজের মধ্য দিয়েই আবরার ফাহাদ চিরকাল বেঁচে থাকবে এটুকুই চাওয়া‘। সেইসাথে দ্্রুত আসামীদেও বিচারও দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কয়েজন শিক্ষার্থীরা আবরারের কবর জিয়ারত শেষে জানান, আবরার খুব ন¤্র ও ভদ্র ছেলে ছিলো সেইসাথে তুখোড় মেধাবীও ছিলো । আবরারের এমন হত্য আমরা আজও মেনে নিতে পারিনা। আর তাই এই হত্যার সাথে যারা যারা জড়িত দ্রুত তাদের ফাঁশি দেওয়া হোক।

এদিকে আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্ট ষ্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।

২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আবরার ১৯৯৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গায়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বর্তমানে আবরের বাবা, মা ও ছোট ভাই ফায়াজ কুষ্টিয়া শহরে বসবাস করে।