চার বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ থেকে মালায়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করেছে সে দেশের সরকার। এই প্রক্রিয়া সম্পর্ন হলে হলে আবারো বাংলাদেশী শ্রমিকরা মালায়েশিয়ায় শ্রম বিক্রির সুযোগ পাবে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এক হাজার ৫২০টি এজেন্সির তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। এই তালিকা থেকে ২৫ টি এজেন্সিকে বাছাই চুড়ান্ত করেছে মালায়েশিয়ার সরকার। এই ২৫ টি এজেন্সি ১০ টি করে এজেন্সিকে তাদের পরিকাঠামোর মধ্যে রেখে লোক পাঠানোর সুযোগ দিবে। সেই হিসেবে কর্ম পরিধির মধ্যে থাকার সুযোগ পাবে ২৭৫টি এজেন্সি।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ দোতুক সেরী সারাভানান বলেছেন, মালয়েশিয়ায় শ্রম সমস্যা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। কেননা, শ্রমবাজার ইস্যু আন্তর্জাতিকভাবে তাদের অবস্থানকে কলঙ্কিত করছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দিকনিদের্শনা বজায় রাখাসহ বিদেশি কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণের স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দেশটি। রবিবার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেছেন, মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় কেবলমাত্র ২৫টি কোম্পানির সাথে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করবে। এই ২৫ টি এজেন্সিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে তারা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার দিক-নির্দেশনাগুলো মেনে বিদেশী শ্রমিকদের কল্যাণ কর্মীদের জীবনযাত্রা এবং তাদের কাজের অবস্থানের প্রতি তারা লক্ষ্য রাখবে।
তিনি আরো বলেন, ২৫টির আগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে ১০টি কোম্পানি জড়িত ছিল। কর্মীদের কল্যাণ ও জীবিকা রক্ষার জন্য মনোনীত ২৫টি কোম্পানিতে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স মেকানিজম’ প্রয়োগ করা হয়েছে। কর্মীদের কল্যাণেই ১০টি থেকে কম্পানির সংখ্যা ২৫টি করা হয়েছে।
এখন থেকে বিদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমোদন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আসতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি আরও জানান, বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করা হয়েছে, যেটি আগে স্বরষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ছিল। মালয়েশিয়ায় ব্যবসাবাণিজ্য ও শিল্পখাতে বিরাজমান শ্রমিক সংকট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এখন সংশিস্নষ্ট কম্পানির দায়িত্ব হলো মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত কর্মীদের জন্য ‘লেভি’ পরিশোধ করা এবং মেডিকেল রিপোর্ট জমাদানপূর্বক ভিসা জোগাড় করা, যাতে করে কোম্পানিসমূহ আমাদের উদ্যোগের ফল ভোগ করতে পারে।
বিবৃতির শুরুতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সংশিস্নষ্ট থাকার যেকোন ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তার সঙ্গে সাক্ষাত ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কমী নিয়োগের বিষয়ে আমার বক্তব্য ভিন্নভাবে ব্যাখা করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাতে মালয়েশিয়ায় বিদেশী কর্মীদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং কর্মপরিবেশের উন্নতির জন্য আমার মন্ত্রণালয়ের নেয়া উদ্যোগগুলির বর্ণনা করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২ জুন ঢাকা এসে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে যৌথ পরামর্শক সভা করেন। সেখানে চলতি জুন মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। যৌথ পরামর্শক সভার পরে সেদিন সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, প্রথম বছরেই দুই লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। এ ছাড়া পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের চাহিদা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী আশাকরি পাঁচ লাখ কর্মী আমরা দ্রুত পাঠিয়ে দিতে পারব।
মালায়েশিয়ান সরকার জানিয়েছে, ১৪ টি দেশ থেকে তারা বিদেশী শ্রমিক সংগ্রহ করে। যাদের শ্রমিক সরবরাহের জন্য মনোনীত করা হয়েছে তারা ইচ্ছে করলে যেকোন দেশ থেকে শ্রমিক এনে দিতে পারবে। এই সুযোগ যাতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের স্বার্থ ক্ষুন্ন না করে সেদিকটা বিবেচনায় রাখা আবশ্যক।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ২০,২০২২//

Discussion about this post