Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 2:52 am

আব্বা দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন: শহিদ ইসুফের কন্যা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়:
৫ই আগস্ট কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শহিদ ইউসুফের কন্যা সীমা খাতুন বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, “আমার আব্বা দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন, আমার কোনো আফসোস নেই। আমাদের খানাপাড়ার ১১ বছরের শিশু আব্দুল্লাহকে থানার ভেতরে গুলি করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তখন ছাত্র ভাইয়েরা মাইকে সবাইকে ডাকছিলেন —আপনারা যেখানেই আছেন চলে আসুন। সবাইকে একে একে গুলি করে মেরে ফেলছিল তারা। আব্বা বৃদ্ধ মানুষ হলেও আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। তার সারা শরীরে রাবার বুলেট লাগে, রক্ত ঝরতে থাকে। চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরলেও তিনি ঘরে বসে থাকেননি।”

রবিবার (৩ আগস্ট) দুপুর একটায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ছাত্র-শিক্ষক সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে শহিদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “আমরা কেউ ঘরে বসে থাকতে পারিনি। পাঁচ তারিখে আমার ভাইদের ডাকে আমিও পথে নেমেছিলাম। আমরা গ্লাসে করে পানি খাওয়াইছি, বিস্কুট দিয়েছি, কখনো কখনো লাঠি হাতে তুলে দিয়েছি। তারপরও আমরা আন্দোলনের শরিক ছিলাম।”

বাবা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, “৫ আগস্ট সকালে আমার আব্বা বাজার করে বাসায় ফিরেছিলেন। ঠিক সেই সময় আমাদের গলিতে পুলিশ প্রবেশ করে। তারা গুলি চালায়, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে, এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদের গায়েও রাবার বুলেট ছোঁড়ে।

সেদিন আমি সকাল থেকে আন্দোলনে ছিলাম। দুপুর দুইটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে খবর পাই যে আমার আব্বা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি আমার শিশু সন্তানকে সঙ্গে করে আন্দোলনের মাঠ থেকে দৌড়ে হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি তিনটি লাশ ঢাকা রয়েছে। প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে আমার আব্বার পা দেখে শনাক্ত করি। সেই অবস্থায় আমি নিজে লাশ নিয়ে আসি। আমার গর্ব হয় আমার আব্বা দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন।”

অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সহ-সমন্বয়ক, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া আন্দোলনকারী সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীরা ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে ১৭টি শহীদ পরিবার ও আন্দোলনে আটক হওয়া ৩১ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এসময় তারা বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন এবং সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।