রহমান মৃধা:
আমারও কিন্তু কিছু প্রিয় মানুষ আছে যাদেরকে আমি পছন্দ করি। পছন্দের করার পেছনে কোনো দেনা-পাওনা বা আবেগ-প্রবণতা জড়িত না, তারপরও তাদেরকে আমি পছন্দ করি। কারণ তারা মানুষের কথা ভাবে। একবার না, বার বার ভাবে। নানাভাবে হৃদয় থেকে কিছু করে, সুখে-দুখে পাশে থাকে। এ ধরনের মানুষ আমার কাছে প্রিয়। এদের সংখ্যা কিন্তু কম না। এরা গোটা বিশ্বের আনাচে কানাচে পড়ে আছে। এরা নিজের খেয়ে অন্যের কথা ভাবে, বিপদে- আপদে তাদের পাশে এসে হাজির হয়। এদেরকে আমি পছন্দ করি, কারণ এরা হলো আলোর ফেরিওয়ালা। আকাশের ওই মিটি মিটি তারার মতো আমার হৃদয়ে এরাও জ্বলে এবং যে আলোয় আমার মন ভরে যায়। আমি স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব, এতবড় একটি সম্মান স্রষ্টা আমাকে দিয়েছেন, ভাবতেই গা শিউরে উঠে! এই ভাবনাটুকু আমাকে সব সময় উদ্দীপনা জোগাড় করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমি মানুষের মাঝে বসবাস করতে পছন্দ করি। আমি যেহেতু তাদের পছন্দ করি তাঁরাও আমাকে পছন্দ করে–এর নাম ভালোবাসা। আমার মৃত্যুতে নয় আমার জন্ম দিনে আমাকে দেশ বিদেশ থেকে নানা জনে নানা ভাবে উইশ করেছে। আমি সেখান থেকে কয়েকটি উইশ তুলে ধরবো। তুলে ধরার প্রধান কারণ আমি যা ভালো মনে করি সেটা শেয়ার করতে পছন্দ করি, আমার শেয়ার ভ্যালুর কনসেপ্ট থেকে। তারপর আমি রিফ্লেক্ট করতে পছন্দ করি, সেটাও আরেকটি কারণ।
এবার আসুন শুভাকাঙ্ক্ষীদের হাজারও মন্তব্যগুলোর মাঝে কয়েকটি উইশ দেখি;
“শুভ জন্মদিন।
মনের মধ্য থেকে সেই প্রত্যাশা করি।
পৃথিবী যেন জানে বাকিটা সময়, এখানে আপনার আগমন হয়েছিলো। প্রতিভা ও মানবিকতার প্রমাণ যেন আল্লাহ আপনাকে আরো বেশি দেয়ার সক্ষমতা প্রদান করে। ইতিহাসের প্লাটিনাম অক্ষরে আপনার নাম যেন পড়তে পারে পরবর্তী প্রজন্ম।”
“ শুভ জন্মদিন মানবিক মানুষ🙏
-ভালোবাসা নিয়ে ভালো কাটুক যুগ-যুগান্তর।
★★ সবসময় ভালো থাকবেন -এই কামনা কর
সম্মান,শ্রদ্ধা,মর্যাদায় পরিপূর্ণ হোক আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত।”
“ শুভ জন্মদিন মানবতার ফেরিওয়ালা রহমান মৃধা ভাই”
“ শুভ জন্মদিন, বিদেশের মাটিতে থেকেও দেশের আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতিকে আপনি কখনো ভুলে যাননি। আপনার মতো হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তির জন্য সবসময় শুভকামনা রইল।”
”শুভ জন্মদিন দোস্ত! সুস্থ্য থেকো, হাসিখুশি থেকো, হৈ চৈ করে চারপাশটা জমিয়ে রেখো অনেক দিন। দোয়া রইল।”
”সুদীর্ঘ ৪০টি বছর যাকে দেখিনি! এমন মানুষটির শুভ জন্মদিনে দু’টি কথা।
থাকেন বিশ্বের সব সূচকের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ সুইডেনে। তিনি গান করেন মনের সুখে। স্বাধীনভাবে ঘুরতে পছন্দ করেন। খেলাপাগল মানুষ। স্বপ্ন দেখেন নিজ দেশের ছেলেরা হয়তো একদিন ফুটবল বা ক্রিকেটে বিশ্ব জয় করবে। সে ব্যাপারে তিনি শুধু স্বপ্ন দেখেই বসে নেই, কাজ শুরু করে দিয়েছেন বেশ জোরেশোরে। বাংলাদেশে গড়ে তুলেছেন ‘ফুটবলারস হান্ট একাডেমি’। নিজ সন্তানেরা টেনিসের অন্যতম তারকা খেলোয়াড়। জনাথন এবং জেসিকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টেনিস দুনিয়া। সুনাম কুড়িয়ে আনছে দেশের জন্য। উজ্জ্বল করছে বাবা মার মুখ। তাদের সাফল্য দেখে আমরা গর্বিত হই, পুলকিত বোধ করি।
এর বাইরেও মানুষটির নানান ধরনের গুণে আমি মুগ্ধ হই। তিনি সারাক্ষণ দেশ এবং দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেন। ভাবেন অসহায়, অস্বচ্ছল মানুষদের কথা। চিন্তা থাকে সব অসহায় মানুষদের স্বাভাবিক মানুষের কাতারে নিয়ে আসতে। সেজন্য তিনি বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বপ্নের সারথি হয়ে ধরা দিয়েছেন।
তিনি লেখেন। পুরোদস্তুর একজন লেখক। অসংখ্য লেখা প্রতিদিন দেশের সব লিডিং পত্রিকায় ছাপা হয়। আমরা পড়ে প্রীত হই। বেশ কয়েকটি বইও ইতোমধ্যে লিখেছেন। বেশ সাড়া জাগিয়েছে দেশের মানুষের মধ্যে। সবচেয়ে যে গুণটি আমাকে আকর্ষণ করে তাহলো, মানবিক এবং সব ভালো কাজের চালক হয়ে কাজ করেন মানুষটি। ব্যক্তিগত জীবনে কাজ করেছেন বিশ্বের নামকরা ওষুধ কোম্পানি ফাইজারে। প্রতিষ্ঠানটিতে পরিচালক হিসেবে দীর্ঘ দিন সুনামের সাথে কাজ করেছেন। মানুষটির নাম মাহবুবুর রহমান মৃধা। জন্ম প্রত্যন্ত পাড়াগাঁয়ে। নহাটার সম্ভ্রান্ত মৃধা পরিবারে। যে পরিবারের প্রতিটি মানুষের কোনো না কোনো ছোঁয়া এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে।
তিনি আমার স্বপ্নের নায়ক। যাকে স্বচক্ষে সামনে থেকে দেখিনি। কিন্তু তার নেতৃত্ব গুণ, মানবিক রসদ সুদূর সুইডেন থেকে কর্পূরের মতো উড়ে এসে আমার মনোজগতে বিদ্ধ হয়। আর চৌম্বকের ন্যায় গেঁথে যায় মানসপটে। জ্বালানি হয়ে কাজ করে আমার মধ্যে। আর আমি চলি আর চলি..
আশা করি, বিশ্বের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা এমনসব মানবিক মানুষদের সম্মিলিত প্রয়াসে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু একটা করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
শুভ জন্মদিন হে প্রিয়জন, ভালো থাকবেন। ভালো রাখবেন আপনার সব কাছের মানুষদের”।
আমি নানা জনের হৃদয়ের জালে নানাভাবে ধরা পড়েছি জেনে বেশ আপ্লুত বোধ করছি। তাদের উইশগুলো বিছনায় শুয়ে শুয়ে পড়ছি। আমার পাশে রয়েছে আমার স্ত্রী, মারিয়া। সে ইংরেজি, সুইডিশ এবং স্পেনিশ উইশগুলো পড়েছে। পরে সে জানতে চাইলো বাংলায় কী উইশ করেছে আমাকে। আমি সেগুলো অনুবাদ করে শুনালাম। মারিয়া সব শেষে বললো বেশির ভাগ উইশের ভাষা ভিন্ন হলেও অনুভূতিগুলো একই রকমের। তবে অনেকগুলো উইশ আমার হৃদয়কে বেশ নাড়া নিয়েছে। এ ধরনের সুন্দর কথা আমরা বলতে শুনি যখন ব্যক্তি আমাদের ছেড়ে আজীবনের জন্য চলে যায় কিন্তু তোমাকে সবার হৃদয়ের কথাগুলো তোমার জন্মদিনে জানিয়েছে। তাদের অনুভূতির কথাগুলো জেনে সত্যি ভালো লাগছে, চমৎকার। তারপর মারিয়া আমাকে বলেছিল ”jag är stolt över dig”। এটা শোনার পর আরো উদ্দীপনা বেড়ে গেল যেন আমার বাকি জীবনটা সবার ভালোবাসার ছত্রে পরিচালিত হয়। সবাইকে প্রাণঢালা ভালোবাসা এবং অনেক ধন্যবাদ আমাকে জন্মদিনে উইশ করার জন্য। সব শেষে শুধু বলতে চাই— ভালোবেসে সবাই নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমাদের মনের গভীরে
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com