Print Date & Time : 20 April 2025 Sunday 7:02 pm

আম্রুপলী আমভাঙ্গার সময় না হলেও ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত সাপাহারে আমের হাট

সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী আমের রাজা আম্রুপলী বা রুপালী আম বাজারজাত করণের আরো কয়েক দিন বাঁকি থাকলেও প্রচন্ড গরমে গাছের আমে পাক ধরায় আমের রাজধানী খ্যাত নওগাঁর সাপাহারে এখন হতেই আমবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় সরগরম হয়ে ঊঠেছে আমের হাট।

দেশের উত্তরা লের মধ্যে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে নওগাঁর সাপাহারে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত আম ব্যাবসায়ীগন অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও এসেছেন আম কিনতে সাপাহারে। নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকা সাপাহারের আম সুমিষ্ট হওয়ায় দেশের সর্বত্রই এই আমের চাহিদা ও রয়েছে অনেক। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় হাটে ভ্যান,টলি পিকআপ সহ নানা ভাবে আসা আমের বেচা- কেনা চলে এই হাটে। সাপাহার সদরের জিরো পয়েন্ট থেকে পাশ^বর্তী পতœীতলা উপজেলার দিবরের মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩কিলোমিটার দীর্ঘ হয় এই হাট।

তবে এই বছর লম্বা খরা ও তীব্র তাপদাহের প্রভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিভিন্ন জাতের আমের সাথে আ¤্রপলী আমও আসছে বাজারে। এবার সাপাহার সদরে প্রায়২৫০টি আম আড়তে আমের বেচা-কেনা হচ্ছে বলে আমব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তীক সাহা জানিয়েছেন। প্রতিদিন এসব আড়ৎগুলোথেকে ৫ থেকে ৮হাজার মন আম ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

তবে চলতি মাসের ২২ তারিখের পর এই বেচা কেনার পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন এখনকার আম ব্যাবসায়ী ও ক্রেতাগন।

এছাড়াও উপজেলার খঞ্জনপুর মোড় ফুরকুটির মোড়, উচাডাঙ্গা মোড়, নিশ্চিন্তপুর মোড়, হরিপুর মোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় আরোও প্রায় ৩৫০টি আড়ৎ ঘরে আমের বেচা-কেনা চলছে। যার ফলে কর্মসংস্থান ও হচ্ছে কয়েক হাজার বেকার মানুষের।

সরেজমিনে বাজারে আম বিক্রেতা আব্দুর রহিম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবার কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি সহ অন্য সকল কিছুর খরচের তুলনায় আমের বাজারে আমের দাম অনেক কম। এছাড়া আমের ওজনের ক্ষেত্রে ৪৫কেজি থেকে ৪৮কেজিতে ১মন হিসেবে কেনা বেচার কথা থাকলেও আম আড়তদারগন আমচাষীদের জিম্মি করে ৫০/৫৩ কেজিতে ১ মন হিসেবে মাপ নিচ্ছে। সঠিক নিয়মে নির্ধারিত ওজনে আম কেনা বেচার জন্য আমচাষীরা বাজার মনিটরিং কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এবিষয়ে সাপাহার বাজার আমচাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানান, আমের ওজনের বিষয়ে কিছু বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে দ্রæতই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রশাসনিক ভাবে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী এবার গুটি (স্থানীয়) আম ২২ মে পাড়া শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে গোপালভোগ ২৮ মে, খিরসাপাত/হিমসাগর ২ জুন, নাগফজলি ৭ জুন, ল্যাংড়া/হাঁড়িভাঙা ১০ জুন, ফজলি ২০ জুন, আম্রপালি ২২ জুন এবং আশ্বিনা/বারি-৪/গৌড়মতি/কাটিমন ১০ জুলাইয়ের মধ্যে হারভেস্টেং শুরু হবে। আর এই সময়ের মধ্যে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করবেন আমচাষীরা।

গতকাল সাপাহার সদর আম হাট ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে ল্যাংড়া আম ১১০০-১৩০০, নাগফজলি ১৭০০-২০০০, খিরসাপাত ২০০০-২৫০০, এবং আমের রাজা আম্রপালি ১৮০০-২৭০০ প্রকারভেদে বিক্রি হতে দেখা গেছে ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী উপজেলায় এ বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৫ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাপাহার বাজার আম ব্যাবসায়ী সমিতির তথ্যানুযায়ী প্রতিদিনই সাপাহার বাজারে কয়েক কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হয়ে থাকে।যার ফলে গত কয়েক বছরে এলাকার কৃষক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ।

খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৪জুন ২০২৩