নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে একটি বাল্য বিয়ের অনুষ্ঠান পন্ড করে সেই অনুষ্ঠানের খাবার এতিম খানা মাদ্রাসায় দিয়ে গেলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পার্থ প্রতিম শীল। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ফারাজী পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক নুরে সফুরা ফেরদৌস জানান, কথিত কোর্ট ম্যারিজের নামে ভুয়া নোটারি হলফনামা তৈরী করে একটি চক্র দিনের পর দিন কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের কাছে অসংখ্য অভিযোগ আছে। গতকাল ৯ম শ্রেনীর ছাত্রীর বাল্য বিয়ে আমরা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত কথিত নোটারি হলফনাটি পিএম সিরাজুল ইসলামের চেম্বার থেকে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এবিষয়ে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন প্রশাসনকে অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করেছি’।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, গত ৩ ডিসেম্বর সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের মো: কালু মিয়ার পুত্র ওয়েল্ডিং শ্রমিক মো: নিশান (২৫)’র সাথে একই এলাকার ফারুখ হোসেনের কন্যা দি ওল্ড কুষ্টিয়া হাই স্কুলের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী ফাহিমা আক্তারের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু আইনগত বাধা থাকায় সেই বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে নারাজ হন ইউনিয়নের কাজী মুজাফফারুল ইসলাম। পরে দুই পরিবার কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে নোটারি আইনজীবী পিএম সিরাজের চেম্বারে গিয়ে হলফনামার মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজ সম্পন্ন করে। যদিও এ্যাড. পিএম সিরাজুল ইসলাম এমন অভিযোগকে নাচক করে জানান, কোন আইনজীবীর চেম্বারে বাল্যবিয়ের সুযোগ নেই।
স্থানীয় দি ওল্ড কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল হক উজ্জল জানান, ‘প্রতি বছর আমার স্কুলের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেনীতে পড়–য়া শতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। পরে তাদের পরিবারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা সবাই বাল্য বিয়ের শিকার। কথিত নোটারি হলফনামা তৈরী করে কোর্ট ম্যারেজের নামে প্রতি বছর এই ঘটনা ঘটে যাচ্ছে’।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল জানান, বাল্যবিয়ের সংবাদ পেয়ে শুক্রবার বিকেলে হাটশ হরিপুর গ্রামের ঘটনাস্থলে যাই, তখনও বরপক্ষ কনের বাড়িতে এসে পৌছেনি। এসময় কনের অভিভাবককে অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সাথে ভ্রাম্যমান আদালত শুনানী কালে স্থানীয়দের অনুরোধে মানবিক বিবেচনায় কনের মা-বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। একই সাথে বরপক্ষের জন্য রান্না করা খাবার জব্দ করে ওই গ্রামের উপজেলার হাটশ হরিপুর গোরস্থান সংলগ্ন এতিমখানায় এ খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানালেন তিনি। কথিত কোর্ট ম্যারিজের নামে এধরণের বাল্যবিয়েকে বৈধ করার কোন সুযোগ নেই। যারা এধরনের ভুয় হলফনামা তৈরিতে জড়িত বলে চিহ্নিত হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনে পত্র প্রেরন করেছি’।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২০ জানুয়ারি ২০২৪

Discussion about this post