Print Date & Time : 11 May 2025 Sunday 2:17 pm

’ঈদের আনন্দ যেন আর স্পর্শ করে না ওদের ’

গোফরান পলাশ, কলাপাড়া: ঈদের নতুন জামা, লুঙ্গি কেনার সক্ষমতা নেই এখন তাদের। ঈদের দিনে ছেলে মেয়েদের নিয়ে নতুন জামা কাপড় পড়া, বাড়ী বাড়ী ঘুরে
সেমাই-পায়েস-মলিদা খাওয়া প্রায় ভুলেই গেছে ওরা।পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলের জেলে পল্লী ও আবাসন প্রকল্পে বসবাসরত হতদরিদ্র পরিবার গুলোর অভাব
অনটনের সংসারে ঈদের আনন্দ যেন আর ওদের স্পর্শ করে না।

উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিঃমিঃ দুরত্বে পুর্ব দিকে চরচান্দুপাড়া,
বুড়োজালিয়া ও আবাসন প্রকল্পে বসবাসরত প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারে ঈদের আনন্দ
যেন ম্লান হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওরা ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে
সংগ্রাম করে চলছে। এখানকার হতদরিদ্র পরিবার গুলোর নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকায় ওরা যখন যে কাজ পায় তা দিয়ে উপার্জন করে চলে ওদের জীবন জীবিকা। নতুন করে এসব ভূমিহীন পরিবার গুলোর বাঁচার আকুতি স্বচ্ছল ব্যক্তি কিংবা
জনপ্রতিনিধিদের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেনা। নিজ গ্রামে কোনো কাজ না থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ও শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে এরা জীবন ও
জীবীকার তাগিদে। যাদের সংসারে কর্মক্ষম ব্যক্তি নেই, তাদের অনেকে বেঁচে
নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি। এ সব পরিবারের নারী পুরুষেরা এখন সপ্তাহে তিন-
চারদিন ভিক্ষা করে যা পায় তা দিয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে জীবন চলছে
তাদের।

জানা যায়, ২০১৮-১৯ সালে উপজেলার লালুয়া ইউনিয়ন এর চর চান্দুপাড়া গ্রামে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা জমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্তরা অদ্যবধি ক্ষতিপুরনের টাকা না পাওয়ায় বিপদ সঙ্কুল পরিস্থিতি যেন তাদের পিছু
ছাড়ছেনা। অনেকেই আবাসন প্রকল্পে ঠাঁই না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন
করছেন। হাতে কাজ না থাকায় ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্যহয়ে নিজেকে নিয়োজিত
রেখেছেন।

চান্দুপাড়া গ্রামের অন্তত: ১০ জন মহিলা এখন ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে
বেছে নিয়েছেন। জয়ফুল (৫৬), রোজিনা বেগম (৩৫), বিধবা আকলিমা বেগম( ৫৩) এসব
মহিলারা বেঁচে থাকার তাগিদে এক মুঠো ভাতের আশায় গ্রাম থেকে গ্রামে ভিক্ষা
করে বেড়াচ্ছেন। সারাদিন বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করে যা পাচ্ছেন তা দিয়ে
কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে জীবন চলছে তাদের। কারো পড়নে কাপড় নেই, কারো জামা
নেই। অধিকাংশ পরিবারের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা থাকছে অর্ধনগ্ন হয়ে। নিজস্ব
সম্বল বলতে আছে শুধু তাদের একটি ভিক্ষার পুটলি।

কথা হয় চান্দুপাড়া গ্রামের জয়ফুল (৫৮) এর সাথে। জয়ফুল কোন মতে কান্না
চেপে রেখে বলেন, ’বাবা আমাগো আবার ঈদ কি? ঘরে খাওন নেই, পরনে কাপড় নাই।
ছেলে মেয়েদের খুশির দিনে না পারি ভাল একটা কাপড় দিতে, না পারি একটু ভাল
মন্দ খেতে দিতে। ছেলে মেয়েরা সব শেষ কবে সেমাই – লুডুলস খাইছে তাও মনে
নাই।’

আমেনা বেগম (৪৮) বলেন, ’সরকার আমাদের জমা জমি অধিগ্রহণ করে নিয়ে বসবাসের
জন্য আবাসন প্রকল্প করে দিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজ দেন নাই। আমরা খেটে
খাই।’

লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, ’সরকার
অসহায়, দুস্থ মানুষের জন্য ঈদ উপলক্ষে দশ কেজি করে চাল দিয়েছেন। তা
সঠিকভাবে বিতরন করা হয়েছে।’

দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//