Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 5:52 pm

উজানের ঢলে নাকানি চুবানি খাইছে তিস্তা পাড়ের মানুষ

উজানের ঢলে নাকানি চুবানি খাইছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। রাত হলে তিস্তার পানি বাড়ে দিন হলে কমে। রেখে যায় ধ্বংস চিহ্ন। এতে করে তিস্তা পাড়ের মানুষ, কৃষি ও কৃষক স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বারবার। সহায় সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে অনেকে।  সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তথ্য ডাটাবেজ তৈরিতে হাত দিয়েছে লালমনিরহাট পানি উন্নয়নবোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তর। আজ রবিবার তারা মাঠ পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দির, গীর্জার প্রতিনিধিদের তথ্য সংগ্রহ করছে। আগাম বন্যার সর্তকতা জানাতে এই ডাটাবেজ কাজ করবে।

৬  আগষ্ট শনিবার রাত  ৯ টায় জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানির ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি পুনরায় বিপদ সীমা ওপরে প্রবাহিত হয়। গভীর রাতে যাহা  বিপৎসীমার ২০/২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহত হয়। ৩/৪ দিন বন্যার সর্তকতা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের বন্যা সর্তকতা কেন্দ্র। তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মহা বিপর্যয় পড়েছে। আতস্কে নির্ঘুম রাত কাটেছে। পানিতে নাকানি চুবানি খেতে হচ্ছে।

এদিকে গত সাত দিন আগে পহেলা আগষ্ট তিস্তা নদীর পানি উজানি ঢলে ২৫ সেঃমিঃ বিপৎ সীমার ওপরে প্রবাহিত হয়েছিল। পানি প্রবাহেট পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে  তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পুষিয়ে উঠে চরবাসী বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করে। পুনরায় শনিবার তিস্তার পানি বাড়ায়  জেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ, মহিষখোচা, হরিনচড়া, গড্ডিমারী,  সিন্দুর্ণা, হলদিবাড়ি, পূর্ব বিছনদৈই, পারুলিয়া, পূর্বপারুলিয়া, উত্তর পারুলিয়া, শৈলমারী, পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি সহ প্রায় একশত গ্রামের দুই শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের কয়েক হাজার  পরিবার পানিবন্দি  হয়ে পড়ে। তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে তিস্তার জলে নাকানি চুবানি খাচ্ছে। চরের প্রায় ২৪টি সরকারি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কওমি মাদ্রাসা, হেফজখানা বন্ধ  হয়ে গেছে। হাটবাজার তলিয়ে গেছে। তিস্তার কৃষি ও ফসলের ক্ষেত্র কয়েক দফা বন্যার পানিতে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিস্তার কৃষক এখন নিঃস্ব রিক্ত হয়ে পড়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানা গেছে, শনিবার  রাত নয় টায় ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার দুই সে.মি  ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গভীর রাতে যাহা ২০/২৫ সে.মি গিয়ে দাড়ায়। কিন্তু  রবিবার বেলা তিনটায় ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেহেতু দার্জিলিং, কুচবিহার, শিলংয়ে গত কয়েক ঘন্টা আগে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই পানি তিস্তা দিয়ে প্রবাহিত হবে। ভারত তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দিয়ে পানি প্রত্যাহার শুরু কাজটি রাতে করে থাকে।

ডালিয়া পানি উন্নয় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায়  ব্যারাজের সব কটি (৪৪) জলকপাট খুলে ভাটিতে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এদিকে লালমনিরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান জানান, তিস্তা পানি সরবরাহের বিষয়ে ভারতের সাথে তথ্য আদান প্রদানের একটি চুক্তি আছে সেটি ১৫ মে হতে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বছরে ৪ মাস কার্যকর থাকে। এই চুক্তিটি সারা বছরের কার্যকর রাখার জন্য যৌথ নদী কমিশনে আলোচনা হচ্ছে।

এদিকে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি ভরতীয় উজানের ঢলে বেড়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় বারবার। তাই ক্ষতি কমিয়ে আনতে তিস্তা পাড়ের চরবাসীর ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, ধর্মীয় নেতাদের ডাটাবেজ করার কাজ আজ রবিবার হতে শুরু হয়েছে। এই ডাটাবেজের মাধ্যমে বন্যা সর্তকীরণবার্তা তিস্তা পাড়ের মানুষদের মাঝে জানিয়ে দেয়া হবে।

 এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ০৭,২০২২//