নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় ৭ দশক পূর্বে (১৯৪৯ সাল) কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলার আংশিক কৃষি জমির জলাবদ্ধতা দুরীকরণ, স্থানীয় জলপথ সম্প্রসারনে খননকৃত সাড়ে ৮কি:মি দৈর্ঘ ও ২০-২৫ মিটার চওড়া গোড়াই খালটি এখন অস্তিত্বহীনতায় ভুগছে। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে নদী কমিশনের বিধি না মেনে কথিত উন্নয়নের অজুহাতে খোদ সরকারী দপ্তরের খামখেয়ালি ও অদুরদর্শিতার কারনেই বেখল হয়ে গেছে খালটি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই খালটি ২০১৮ সালে উন্নয়নের কথা বলে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ অনাপত্তি পত্রের মাধ্যমে নিজেদের আয়েত্বে নেই।
পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার উদ্যোগে সরকারী অর্থব্যয়ে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেলে মাটি ভরাট করে একাধিক কালভার্ট ও রাস্তা নির্মান করার কারনেই দখলবাজির ষৌলকলা পূর্ন হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে এলজিইডির দাবি, খালটির উপর যে কয়টি ব্রিজ কালভার্ট করা হয়েছে তা বাপাউবো’র সাথে পরামর্শ করেই করা হয়েছে। এলজিইডির এমন দাবিকে নাচক করে বাপাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কোনরূপ এনওসি ছাড়াই এলজিইডি বিধি না মেনে এসব কালভার্ট করেছেন।
বাপাউবো সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া নামক স্থান হতে গড়াই নদীর ডানতীর থেকে উৎসারিত হয়ে কমলাপুর, মঙ্গলবাড়িয়া বাজার, উদিবাড়ি, বাড়াদি, উদিবাড়ি কলোনি, চৌড়হাস মন্দিরপাড়া, চেচুয়া, ফুলবাড়িয়া, জগতি, বাইপাস হয়ে মিনাপাড়া পর্যন্ত সাড়ে ৮কিমি: দৈর্ঘের গোড়াই খাল। নদী-খাল সুরক্ষা আইন না মেনে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেল ভরাট করে সড়ক বিভাগ ০১টি ও এলজিইডির ১৫টি কালভার্টসহ রাস্তা নির্মানের কারনেই এমন দৈন্যদশায় গোড়াই খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
কমলাপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক ফারুক হোসেনের অভিযোগ, ‘উন্নয়নের কথা বলে এখন দেখছি খালের পাড়ে মাটি ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৬০/৭০ ফিট চওড়া খালের দুইপাড়ে ভরাট হয়ে এখন ২৫/৩০ফিট আছে তাও আবার সংস্কার না করায় ময়লা আবর্জনা জমা হয়ে এই খাল দিয়ে পানি জমে ঢুকে থাকে’।
সদর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চাষী হালিম সেখ জানায়, ‘গড়ই খাল ভরাট হয়ে দখল হতি হতি কোন কোন জাগায় এর চিহ্নও খুঁেজ পাওয়া যায়না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় এই খাল দিয়ে এখন আর পানি নিষ্কাশন হয়না। সেই কারনে আমাদের মাঠ বছরের বেশি সময়ই ডুবে থাকে, কোন চাষ হয়না বলেই এখন এই মাঠও হারা যাচ্ছে বাড়ি ঘর হয়ে’।
নদী পরিব্রাজক দল কুষ্টিয়ার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু বলেন, ‘উন্নয়নের নামে পার বেধে ভরাট করে কোন ভাবেই খাল দখল করা যাবে না। খাল বা নদীর সীমানার মধ্যে এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে মূল প্রবাহ বা চ্যানেল বাধাগ্রস্ত হয়’। যদিও এধরনের কান্ডজ্ঞানহীন কাজের অভিযোগ সড়ক বিভাগ ও এলজিইডি’র মতো স্বয়ং সরকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই রয়েছে অসংখ্য’।
কুষ্টিয়া পৌর এলাকার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত গড়াই খালটি সংস্কার করতে ২০১৮ সারে বাপাউবো’র অনাপত্তি পত্র নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি স্বীকার করে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন. ‘আসলে খালটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহনে ঘাটতি ছিলো’।
তবে অদুরদর্শীতা, অবহেলা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে খাল দখল হয়েছে এমন অভিযোগকে নাকচ করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি দাবি করেন, ওই খালের উপর ব্রিজ কালভার্ট যে কয়টা হয়েছে তার সবগুলিই পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনাপত্তি নিয়েই করা হয়েছে’।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন,‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন জায়গায় সরকারী অন্যান্য সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আবেদন করলে সেখানকার মূল অবকাঠামো অক্ষুন্ন রাখাসহ কিছু শর্ত সাপেক্ষে আমরা অনাপত্তি দিই। কিন্তু কুষ্টিয়া পৌর এলাকাধীন কমলাপুর ও মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় গড়াই খালের উপর ব্রিজ কালভার্ট নির্মানে এলজিইডি আমাদের কাছ থেকে কোন এনওসি নেননি’।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ৬ মার্চ ২০২৪