ছয় শিশুর দু্ইজন মাধ্যমিক পাশ। ৪ জন এখনো স্কুলের গন্ডি পেরোয়নি। একজন উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। অন্যজন সহ সম্পাদক পদ পেয়েছেন।
বলতেই হয় বাহবা বাহবা বেশ। তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগে শিশুরা খেলিতেছে তো বেশ। কবিতার লাইনকে হার মানিয়ে বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটিতে স্থান পেয়েছে ছয় শিশু শিক্ষার্থী।
সম্প্রতি তালতলী উপজেলা ছাত্রণীগের পূর্নাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই কমিটিতে উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সহ সম্পাদক পদে জায়গা পেয়েছে ৬ শিশু শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দুজন মাধ্যমিক পাশ করলেও ৪ জনই স্কুলের গন্ডি পেরোয়নি এখনও। উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির পদে শিশুদের রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উপজেলার তৃনমূল ছাত্রলীগ কর্মীরা।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগের দিন অর্থাৎ ১৬ জুলাই রাতে সরোয়ার হোসেন স্বপনকে সভাপতি এবং এইচএম মিনহাজুল আবেদিন মিঠুকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ। বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন ১৫২ সদস্যদের এই কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই শিশুদের পদে রাখা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয় পুরো উপজেলা জুড়ে। এছাড়াও বিবাহিতদের কমিটিতে পদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কমিটির সহ সম্পাদক পদে আছেন সানজিদ মাহমুদ সিফাত, রিয়ান জোমাদ্দার ও মো. হাসান হাওলাদার। এদের মধ্যে রিয়ান ও সিফাত তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। এই দুজনের মধ্যে সানজিদ মাহমুদ সিফাত ৮ম শ্রেনী, রিয়ান জোমাদ্দার ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র। এবং হাসান হাওলাদার তালতলী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র।
এছাড়াও এই কমিটির উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকের পদ পাওয়া আরাফাত জোমাদ্দার তিনিও তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। অপরদিকে সহ সম্পাদক পদ পাওয়া মো. রনি খান ও ইমরান খান গত ২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছেন ৷ বর্তমানে তারা কড়ইবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
এবিষয়ে তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল সরকার বলেন, রিয়ান, সিফাত এবং আরাফাত আমাদের স্কুলের ৬ষ্ঠ, ৮ম এবং ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। তবে আমার স্কুলের এই শিশু শিক্ষার্থীরা তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেয়ায় ক্ষোভ অন্যান্য নেতা কর্মীরা। এবিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী রইসুল আলম সাদ্দাম বেপারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রানের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করে আসছি, আমার মত আরও অনেক কর্মী আছে যারা নিঃস্বার্থ ভাবে ছাত্রলীগ করে আসছি। কিন্তু আমাদের মত যারা আছেন তারা পদ পায়নি, পদ পেয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিশুরা। এটা আমাদের তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের জন্য লজ্জার।
এবিষয়ে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, কেন্দের নির্দেশে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া যেদিন তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হয়েছে তার পরদিন জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন ছিল, তাই তাড়াহুড়ো করে করে কমিটি দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক ও সম্পাদক তানভীর হোসাইন স্বাক্ষরিত ১৪ সদস্যের একটি আংশিক তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে সরোয়ার হোসেন স্বপনকে সভাপতি ও মিনহাজুল আবেদিন মিঠুকে সম্পাদক করা হয়। এরপর চলতি বছরের ১৬ জুলাই এই আংশিক কমিটির পূনাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করে জেলা ছাত্রলীগ।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post