ধান-চাল উৎপাদনে বরাবরই এগিয়ে উত্তরের জেলা নওগাঁ। চলতি বোরো মৌসুমে এ জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমি থেকে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪১ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। দুই সপ্তাহ যাবত ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে জেলার চাষীদের।
এবার ২০-২৮ মণ পর্যন্ত ফলন পাচ্ছেন চাষীরা। সদ্য কাটা মাড়াইকৃত প্রতি মণ ধানের দাম পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ দাম যথেষ্ট নয় বলে দাবি করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা। প্রতি মণ ধানের দাম কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা সরকারিভাবে নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নিজেই কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বঙ্গা মেশিনে মাড়াই করতে দিতে হবে ৩০ কেজি ধান। সব মিলিয়ে ধানের বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী আমার লোকসান হচ্ছে।’
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের খলসী গ্রামের কৃষক আলতাব হোসেন বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে জিরাশাইল ও দুই বিঘা জমিতে ব্রি-৮৮ জাতের ধান আবাদ করে ১০৩ মণ ফলন পেয়েছি। আবাদের শুরু থেকে কাটা মাড়াই পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা, যা গত বোরো মৌসুমের তুলনায় ১৬ হাজার টাকা বেশি। দুই সপ্তাহ আগে ধান কাটার পর বাড়িতে বসেই ৯৮০ টাকা মণ দরে ৬ মণ ধান বিক্রি করেছি। এখন শুনছি ১ হাজার ১০০ টাকা মণ। ডিজেল, বিদ্যুৎ ও সারের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। ফলে যেভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে সে তুলনায় ধানের দাম খুবই কম। খরচ বেড়ে যাওয়ায় আদৌ আউশ আবাদ করব কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী গ্রামের কৃষক স্বপন সরদার বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কৃষকের স্বার্থে প্রতি মণ ধানের মূল্য সরকারিভাবে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা দরকার।’
একই উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা আহসান হাবিব বলেন, ‘ধান উৎপাদন খরচের তুলনায় সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা খুবই কম। তিন মাস কষ্টের পর উৎপাদিত ফসল খাওয়ার জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত না থাকলে সেই ফসল চাষে কৃষক আগ্রহ হারাবেন। সার ও সেচে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী দেড় হাজার টাকার কমে ধান বিক্রি করলে চাষীদের পুঁজি সংকটে পড়তে হবে। এতে করে তারা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সমবায় সমিতি ও এনজিওর চড়া সুদের ফাঁদে পড়বেন। তাই ধানের দর পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জেলার প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটার উপযোগী হয়েছে। দুই সপ্তাহ যাবত উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটছেন তালতলী ও হাসাইগাড়ী বিলসহ বিভিন্ন মাঠের চাষীরা। এরই মধ্যে ১০ শতাংশ মাঠের ধান কাটা শেষ হয়েছে। শ্রমিক সংকট নিরসনে জেলার বাইরে থেকে কৃষি শ্রমিক আনতে সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ। প্রায় ১০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন মাঠে কাজ করছে। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারলে ধান উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের বেশির ভাগ চাষীই ধান কাটার পরই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাই তারা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ন্যায্যমূল্য পেতে হলে ধান সংরক্ষণে ধৈর্য ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে হয়। সেটাও নেই অনেকের। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কম দামে ধান কিনছেন। চাষীদের উৎপাদন খরচ বিবেচনায় এরই মধ্যে সরকার ধানের দাম বাড়িয়েছে। কৃষক যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হন সেজন্য বাজার মনিটরিংয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কাজ করছে। ন্যায্যমূল্য পেতে চাষীদের আপাতত ধান সংরক্ষণ করতে হবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ০৫,২০২৩//

Discussion about this post