আগামী ১৫ জুন চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিলেও মাঠে দুই প্রার্থী সমানতালে প্রচারণা করছেন। প্রতিদিন উঠোন বৈঠক হচ্ছে। তাতে হাজিরা দিচ্ছেন পরিচতি মুখ। অবাক করা বিষয়, এক প্রার্থীর উঠোন বৈঠকে ধারা ভাষ্যকার পরিচালনা করছেন আরেক প্রার্থী!
কিন্তু দুই প্রার্থী মানুষের ধারে ধারে চিরাচরিত নিয়মে ভোট প্রার্থনা করছেন। সরেজমিনে প্রচারণার পাশাপাশি ডিজিটাল তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভোট প্রার্থনা এখন নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সেলিম হক যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন ও নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। যারা বেশির ভাগ দলীয় কোন না কোন পদে রয়েছেন।
অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদ যেখানেই উঠোন বৈঠক করছেন সেখানে দেখা যাচ্ছে ঘুরেফিরে একই এলাকার লোকজন। গণ্যমান্য পরিচিত মুখের সংখ্যা খুব কম জনেই সামনে আসছেন। প্রার্থীদের প্রচারণাযুদ্ধে ভোটের মাঠ উত্তপ্ত হলেও ভোটারের তেমন সাড়া নেই। দু’প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোট দেয়ার আগ্রহ দেখা গেলেও সাধারণ ভোটাররা অনেকটাই নীরব। ফ্যাক্টর হতে পারে নারী ভোটার। এমনকি ভোটের দিন তাঁরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি না তা নিয়েও অনেকেই রয়েছেন সংশয়ে।
কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, বিপুল সংখ্যক ভোটার গত ইউপি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতায় তাঁরা ভোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন। ইভিএম মেশিনে একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার বেশ কিছু কথাও বাতাসে ছড়ানো হচ্ছে। যদিও মাঠে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য চলবে বলেও বেশির ভাগ ভোটার ধারণা করছেন।
উঠান বৈঠক। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রার্থীদের মত বিনিময় চলছেই। ভোটকে ঘিরে মাঠ এখন সরগরম। অথচ নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতো কিছুর পরও ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারের আগ্রহের কোনো প্রতিফলন নেই। লোক সমাগমের স্থানগুলোতে দৃশ্যমান হচ্ছে না ভোটের সরব আলোচনা। বরং ভোট নিয়ে জনমনে বিরাজ করছে নানামুখী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-ভীতি-আতঙ্ক। তবে তাঁদের প্রত্যাশা নির্বাচনে যে প্রার্থীই জিতুক, ভালোয় ভালোয় যেন ভোটপর্ব শেষ হয়; এটাই একমাত্র চাওয়া!
গতকাল চরপাথরঘাটায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সেলিম হক উঠোন বৈঠকে ভোটারদের প্রতিশ্রæতি দেন আসন্ন নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে বহুদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন করবেন। পরিষদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন। কেননা, কর্ণফুলী নদীর এপার ওপার মাঝখানে অন্ধকার। এই অন্ধকার দুর করতে শুধু রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন আর রিলিফ বিতরণ করলেই হবে না। দরকার পরিকল্পিত উন্নয়ন।
তিনি আরো বলেন, ‘চরপাথরঘাটার খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা কিছুতেই কমছে না। শুষ্ক মৌসুমেও জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। নৌকার প্রার্থী বলেন, ‘এলাকার যত সমস্যা, যা সমাধান হয়নি, এলাকার উন্নয়নে আর কি কি করা বাকি আছে, কোন কাজ আগে করতে হবে, অর্থাৎ সমস্যা চিহ্নিত এবং তার সমাধানে চরপাথরঘাটার সবাইকে নিয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।’
ওদিকে ভোটারদের উদ্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদ বলেন, ‘২০১১ সালে আট জন প্রার্থীকে হারিয়ে আমি জয়লাভ করেছি। পরে ২০১৬ সালে আবারো নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছি। সব আপনাদের দোয়ায়। নিরীহ জনগণের পাশে আমি সব সময় ছিলাম। এখনো আছি। জনগণ যদি চায় সবকিছু সম্ভব। আমাদেরকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘নির্বাচনে অবশ্যই সুষ্ঠু ভোট হবে। আমরা সবাই সুষ্ঠু ভোটের জন্যই কাজ করব। সেটার জন্য যা কিছু করার সব করব। নির্বাচন কমিশনার তার নির্দেশনা দেবেন। নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসন, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসারসহ সাধারণ নিয়মে সব থাকবে। তারপরও যদি কোনো বিশেষ বিষয় থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
আর//দৈনিক দেশতথ্য//২১ মে-২০২২//