শেখ দীন মাহমুদ,খুলনা প্রতিনিধি: আফিফ হোসেন ধ্রুব এশিয়া কাপে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সহ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। শনিবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই ঘোষনা দেয়। একাধারে ব্যাটিং-বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করা আফিফ বর্তমান সময়ের সেরা একজন অলরাউন্ডার।
নিয়ম ভঙ্গের দায়ে বিকেএসপির থেকে এক সময় বহিষ্কার হওয়া আফিফের জন্ম খুলনার ছোট বয়রার করিমনগরে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) অধ্যয়নরত অবস্থায় নিয়ম ভাঙার দায়ে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে জরিমানা দিয়ে ফের বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয় ক্রিকেট পাগল আফিফকে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি, এগিয়ে যাওয়ার পথে যুক্ত হয়েছে সাফল্যের নতুন দিগন্ত।
বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও মা হেলেনা বেগমের আফিফ হোসেন ধ্রুব একমাত্র পুত্র। সেই ছেলে বেলায় মাকে হারানো ছেলেটা আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন। তবে অলরাউন্ডার ধ্রুবর জন্ম খুলনায় হলেও ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছে বিকেএসপিতেই।
এর আগে, বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন বিকেএসপির হয়ে। যদিও বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলেছিলেন খুলনার হয়ে। পরবর্তীতে খুলনা বিভাগের হয়ে জাতীয় দলেও খেলেছেন তিনি। ইতোমধ্যে দেশের হয়ে ২৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে করেছেন ৩২৪ রান, আর ঝুলিতে রয়েছে ছয় উইকেট।
আফিফের বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ছেলের জাতীয় দলের টি টোয়েন্টি দলে অংশগ্রহনের পর গণমাধ্যমকে বলেন, তৃতীয় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় সে ক্রিকেটের জন্য পাগলামি শুরু করে। এ সময় তাকে মোহামেডান ক্লাবের সেলিম স্যারের কাছে নিয়ে ভর্তি করেন। এরপর ২০১০ সালে বিকেএসপিতে ক্রিকেটের অডিশন দিয়ে শীর্ষ স্থান নিয়ে ভর্তি হয় আফিফ। সেখান থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পাশ করে বের হয়। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবিতে বিবিএতে ভর্তি হয় আফিফ। পাশাপাশি চলে তার খেলাধুলা।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে তার অভিষেক ঘটে জাতীয় দলে। এরপর ধারাবাহিক সাফল্যের অংশ হিসেবে বিশ্ব আসরে খেলার সুযোগ হয়েছে তার।
তবে আফিফের ক্রিকেট ক্যারিয়ার হয়তো বিকেএসপিতেই শেষ হয়ে যেতো জানিয়ে তিনি বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আফিফ বিকেএসপি থেকে বহিষ্কার হয়েছিল।
কারণ ছিল নিষেধ থাকার পরও আফিফ সেখানে মোবাইল ব্যবহার করে এবং ধরা পড়ে। সে ঘটনার পর তিনি, ওর নানা, বড় খালা বিকেএসপিতে গিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তারা সেখানে যাওয়ার পর জানতে পারেন, বিকেএসপির মধ্যে আগে বহিষ্কার হওয়া এক ছেলে ব্যট দিয়ে আফিফকে প্রহার করেছে।
সব মিলিয়ে আফিফ গো ধরে আর বিকেএসপিতে পড়বে না। শিক্ষকরা সে ঘটনা জানার পর ওই বহিষ্কৃত ছেলেকে বিকেএসপির মাঠ থেকে বের করে দেয়। সব শেষে আলোচনার পর ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে আফিফকে পুনরায় বিকেএসপিতে ভর্তি করানো হয়।
এরপর আফিফকে নিয়ে তারা বান্দরবান ঘুরতে যা। সেখানে এক সপ্তাহ থেকে ছেলেকে স্বাভাবিক করেন জনিয়ে তিনি বলেন এটাই ছিল সবচেয়ে কষ্টকর ঘটনা।
সর্বশেষ ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো। এখন তার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। বাবা হিসেবে তার সাফল্য কামনা করে আফিফের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন তিনি।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//