শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: রংপুর অঞ্চলে চলতি মওসুমে সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেধেছে কৃষক পরিবার গুলো।
ধান উঠলেই গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হবে। ঘুরে দাঁড়াবে খাদ্য শস্য ভিত্তিক পুরো দেশের অর্থনীতি। দক্ষিণের ১০ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের ক্ষতি উত্তরাঞ্চল দিয়ে পুষিয়ে যাবে। এমনটি আশা করছে কৃষক পরিবার গুলো। এবার রংপুর অঞ্চলে রোপা আমন ধানের উৎপাদন হতে ১৮ লাখ আট হাজার ৬৪৭ মেট্রিন টন চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে।
রংপুর অঞ্চলে উচুঁ নিচু সকল ধরনের চাষযোগ্য জমিতে এ বছর রোপা আমন ধানচাষ হয়েছে। এ বছর বৃষ্টি পানির নির্ভর এই ধানচাষে অনুকূল পরিবেশ ছিল। প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় উচুঁ— নিচু সকল ধরনের জমিতে এবারে কৃষক ধান চাষ করেছে। বর্তমানের বাজারে ধানের মূল্যেও বেশ ভালো। এতে করে উৎপাদন খরচ উঠে কৃষক লাভবান হবে। চলতি আমন মওসুমে রংপুর অঞ্চলের পাচঁ জেলায় ছয় লাখ ৩৫ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রোপণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমি। যা শতকরা হিসেবে ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ বেড়েছে। রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে এবার আমন মৌসুমে স্থানীয় এবং হাইব্রিড ও উফশী ধান রোপণ করেছে কৃষক। এরমধ্যে রংপুর জেলায় এক লাখ ৭৬ হাজার ৭৪১ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও রোপণ হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমি। গাইবান্ধায় লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি রোপণ হয়েছে। এ জেলায় এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ হেক্টর জমির রোপণ লক্ষ্যমাত্রার জন্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রোপণ হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমি। যা শতকরা ১’শ ২ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলায় এক লাখ ২২ হাজার ১৫৯ হেক্টরের মধ্যে এক লাখ ১৯ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়। লালমনিরহাট জেলায় ৯০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও রোপণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমি। এছাড়া নীলফামারী জেলায় এক লাখ ২৩ হাজার ৩৭ হেক্টরের মধ্যে এক লাখ ১২ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমি চাষাবাদ করা হয়েছে। বিগত বছর গুলোতে উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদ—নদী তিস্তা, ধরলা, করোতোয়ায উজানের ঢলে বন্যা সৃষ্টি হতো। এবারে উত্তরাঞ্চলে তেমন বন্যা ছিলনা। এবছর দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১০টি জেলায় বষার্ মৌসুমের শেষ দিকে এসে মারাত্নক বন্যা দেখা দেয়। এই ১০টি জেলার কৃষি উৎপাদন এবছর বন্যার কারণে শূন্যের কোটায়। এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষি উৎপাদন উত্তরাঞ্চলের কৃষি দিয়ে পুরোন হবে বলে আশা কৃষি অর্থনীতি বিদ ও কৃষক পরিবার গুলোর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উদ্যান বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ খোন্দকার মোহাম্মদ মেসবাহুল ইসলাম বলেন,রোপা আমন মৌসুমে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা পুরোপুরি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আপাতত ধানের খেতে কোন রোগ বালাইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করছি কোন প্রাকৃতিক দুযোর্গ না হলে উৎপাদন অনেক ভালো হবে। এবার রংপুর অঞ্চলে আমন রোপণ করা জমি থেকে ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৪৭ মেট্রিন টন চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে।

Discussion about this post