Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 4:42 am

ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে মধুপুরের আনারস

মোহাম্মদ নাজিবুল বাশার, মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি::

লাল মাটির গড় মধুপুর আনারসের রাজধানী। আনারস প্রাকৃতিক এক প্রাচীন রসালো গুচ্ছ ফল। এটি একটি বিদেশী সুস্বাদু ফল। দেশ এবং বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আনারস বলা হয় ফলের রানী।

আনারস গুচ্ছ ফল নামে পরিচিত। আদি থেকে জানান যায়, আনারস ফলের ইংরেজিতে প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় আন্দ্রে থেভেটের দ্য নিউ ফাউন্ড ওয়ার্ল্ড অর অ্যান্টার্কটাইকের ফ্রেঞ্চ অনুবাদ থেকে।

বাংলাদেশে সর্ব প্রথম আনারস চাষের গোড়াপত্তন হয় ১৯৪২ সালে। মধুপুরের ইদিলপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক গারো সম্প্রদায়ের মিজি দয়াময়ী সাংমা প্রথম আনারস চাষ শুরু করেন। তিনি মেঘালয় থেকে ৭৫০টি চারা এনে তাঁর বাড়িতে আনারস চাষ শুরু করেন। সেই চাষকে সমৃদ্ধ করে বতর্মানে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আনারস চাষ হয়ে থাকে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, বতর্মানে মধুপুরে আনারস চাষ সমৃদ্ধ। এবছর উপজেলায় মোট ৬,৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে জায়ান্টকিউ জাতের ৪০৮৮ হেক্টর, হানিকুইন বা জলডুগি ২,৭৪০ হেক্টর, এমডি-২ সুপার সুইট ১২ হেক্টর।এছাড়াও নতুন করে কৃষকদের মাঝে ২ লক্ষ ৭০ হাজার এমডি-২ সুপার সুইট জাতের আনারসের চারা বিতরণ করা হয়েছে।

কৃষি তথ্য সেবা সার্ভিসের তথ্য থেকে জানা যায় সারা দেশে ৫০ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া, ঘাটাইল ও জামালপুর সদর উপজেলায় আনারস উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল শালবনের একাংশ। শাল বন এলাকার মাটি আনারস চাষের উপযোগী। এখানের জলবায়ু আনারসের অনুকূল। তাই বৃহত্তর ময়মনসিংহে আনারসের চাষ প্রধানত হয় গড় অঞ্চলেই। এছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, দিনাজপুর জেলায় আনারস উৎপাদন হয়েছে ।

আনারসের জাতের মধ্যে হানিকুইন বা জল ডুপি/জলডুগি, জায়ান্টকিউ, ঘোড়াশাল, ফিলিপাইনের এমডি-২ জাতের আনারস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অধিক পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে। জাত ভেদে আনারসের স্বাদ, গন্ধ এবং মিষ্টতা ভিন্ন হয়ে থাকে।

অর্থনৈতিক অপার সম্ভবনা টাঙ্গাইল জেলার লাল মাটির গড় এলাকার আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। প্রতিটি ফলে মুকেটের ন্যায় থাকে বলে এটিকে বলা হয় ফলের রানী। এবছর এ অঞ্চলে ৬,৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জায়ান্টকিউ জাতের চাষ হয়েছে ৪,০৮৮ হেক্টর, হানিকুইন বা জল ডুগি আছে ২য় অবস্থানে ২৭৪০ হেক্টর এমডি-২ চাষ হয়েছে ১২ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও নতুন করে কৃষকদের মাঝে ২ লক্ষ ৭০ হাজার এমডি-২ সুপার সুইট জাতের আনারসের চারা বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের আনারস একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় ফসল। আনারসের সাথে কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে, কলা প্রভৃতি সাথী ফসল বা রিলে ফসল হিসাবে চাষ করা যায়। যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।

শোলাকুড়ি ইউনিয়নের, পিরোজপুর, চাপাইদ গ্রামের আনারস চাষী মো. মোফাজ্জল হোসেন ও মো. তাজুল ইসলাম জানান তারা পৃথক পৃথকভাবে প্রায় ৬ লক্ষ ও ৭ লক্ষ বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ করেছেন। তারা জানান স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে প্রতি টন আনারস ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। খুচরা বাজারে প্রতিটি আনারস জাত এবং আকারভেদে ২০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করেন তারা।

আউশনারা ইউনিয়ের ইদিলপুরে প্রায় ৪০ বছর পূর্বে স্থাপিত আনারস চাষী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও ইদিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক জানান, তার সমিতির অনেক সদস্য আনারস চাষ ও ব্যবসা করে লাভবান হয়েছেন। তবে সরকারি পদক্ষেপে আনারস বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আরও লাভবান হতো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন রাসেল বলেন, মধুপুরে এবার আনারসের ফলন ভালো হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার আশা করছি। গত বছরের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায় মধুপুরে প্রায় পাঁচশত কোটি টাকার আনারস বিক্রি করে মধুপুরের চাষিরা। চলতি মৌসুমেও আনারস বিক্রি করে ভালো লাভের আশায় বুক বেধেছে মধুপুরের আনারস চাষিরা।

এমডি-২ আনারস চাষি মো. মোস্তফা জানান, এটি একটি সুমিষ্ট আনারস লাইফ টাইম পাকা অবস্থায় যেহেতু ৩০ দিন এটির ফলন প্রথম বছর কম হলেও দ্বিতীয় বছর থেকে লাভবান হবেন আশা করছেন। তিনি আরও বলেন মধুপুরে যদি আনারস সংরক্ষণের জন্য কোল্ডস্টোরেজ, আনারস নির্ভর শিল্প কারখানা স্থাপন করতে করা যায় আনারস একটি প্রকৃত অর্থকরী শস্য হিসাবে পরিগণিত হবে। স্থানীয় চাষিরা জানান আনারস একটি লাভজনক ফসল বতর্মানে এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হরমোন প্রয়োগ করে সারা বছর চাষাবাদ করা যায়। অসময়ে আনারস চাষ করলে দামও ভালো পাওয়া যায়। সিজনাল আনারসের পাশাপাশি ১২ মাসই আনারস চাষের প্রযুক্তি পেয়ে অতিরিক্ত মুনাফা এবং বর্ষা আসার পূর্বেই বিপনণ করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আনারস চাষিরা।

আনারস পুষ্টির একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাস । এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, হাড় গঠনে সহায়তা করে, দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায় কাজ করে, চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে,
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক, রক্ত জমাটে বাধা দেয় এবং হৃদপিন্ডে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরবরাহে কাজে সহায়তা করে।
এছাড়াও বতর্মানে ফিলিপাইনের এমডি-২ সুপার সুইট জাতের আনারস বহুমূত্র রোগ (ডায়াবেটিস) রোগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

তথ্য সূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উইকিপিডিয়া, স্থানীয় আনারস চাষি সমিতি ও স্থানীয় কৃষক।

দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//