নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ সদর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে প্রায় দুই শতাধিক ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধে কাজ করছেন দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সদর হাসপাতালে রিপ্রেজেন্টেটিভদের চাপে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন তাদের দেখাতে বাধ্য করায় এখন গলার কাঁটা বলে মনে করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। প্রেসক্রিপশন দেখে নেওয়ায় রোগীদের গোপনীয়তা রক্ষা হচ্ছে না। এতে হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোসহ মোবাইল কোর্টের আওতায় চান সচেতনরা।
বৃহস্পতিবার জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা সদরের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে জোট বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা সংখ্যায় কমপক্ষে ১৫-২০ জন। তাদের হাতে ও কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো আছে ব্রিফকেসের ভিতরে চিকিৎসকদের জন্য আনা নানা উপহার সামগ্রী।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ক্লিনিকের মালিক, চিকিৎসক এবং ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা ও উপহার সামগ্রী নিয়ে ডাক্তাররা নিম্নমানের এবং বিনা কারণে বাড়তি ঔষধ লিখে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কোনো রোগী ও তাদের স্বজনরা চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে বের হতেই হাসপাতাল/ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিকে তাদের ঘিরে ধরে মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভরা। তাদের নানারকম প্রশ্নে রোগী ও স্বজনরা হন বিব্রত। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালসহ জেলা সদরের ল্যাব এইড হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, প্রাইম ল্যাব হাসপাতাল, সেন্ট্রাল ল্যাব হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র।
এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জেলা শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার তিন-চার জন পুরুষ ও মহিলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, তারা শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। হাসপাতালের চিকিৎসকের ঘর থেকে ঔষধ বিতরণ স্থানের গেটে বের হতেই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির ১৫-২০জন প্রতিনিধি বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি তুলে তাদের নানারকম প্রশ্ন করতে থাকে। এতে তারা বিব্রত হন এবং তাদের এখন গলার কাঁটা। নওগাঁ সদর হাসপাতালের পুরাতন প্রধান গেট ও পুরাতন টিকিট ক্রয় কেন্দ্র থেকে আটো গাড়িতে উঠা পর্যন্ত এবং বিভিন্ন ক্লিনিক তারা ৩-৪টি গ্রুপের নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হন বলে অভিযোগ করেন। তাদের মতো অন্তত ১০-১৫ জন এলাকাবাসী, রোগী ও তাদের স্বজনরা মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ চক্রের হাতে হেনস্থা হওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন।
সাংবাদিকের পরিচয় গোপন রেখে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের পুরাতন টিকিট ক্রয় কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওষুধ কোম্পানির ১৫-২০ জন মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভের সকাল ১১টায় ছবি তুলতে লাগলে এবং নাম পরিচয় জানতে চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রকাশ না করার শর্তে ৩০ সেকেন্ডের জন্য প্রতিবেদকের স্মার্ট ফোন কেড়ে নিয়ে রেখে ছবি ডিলিট করার শর্তে স্মার্ট ফোনটি ফেরত দেয়।
জেলার ছাত্র প্রতিনিধি ও জুলাই আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উন্নতম সদস্য ফজলে রাব্বি বলেন, বিভিন্ন গিফট এর মাধ্যমে হাসপাতালের ডাক্তারদের ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জিম্মি করে রেখেছে। তাদের চাপে ও সম্পর্কের কারণে অনেক সময় ডাক্তাররা প্রয়োজনের থেকে বেশি ঔষধ লিখে থাকেন যা রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে তাই রোগীরা সঠিক সেবা পাবেনা। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে নওগাঁ সদর হাসপাতালের গায়িনি কনসালটেন্ট ও (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাদিয়া বলেন, ঔষধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের শনিবার এবং মঙ্গলবার হাসপাতালের বাহিরে আসতে বাধা নেই, তবে কোন রোগী হেনস্তার শিকার হলে লিখিত অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে নওগাঁ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডা.আবু জার গাফফার এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তাদের দৌরাত্ম্য আগের তুলনায় এখন অনেকটা কমেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী বরাবর লিখিত সহায়তা চাওয়া হয়েছে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।