Print Date & Time : 17 July 2025 Thursday 2:26 pm

কখনো সহকারী,কখনো প্রধান শিক্ষকের বেতন তোলা মুসাকে শোকজ

এনামুল হক কুষ্টিয়া: কখনও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে। কখনও বা একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে চাকরি করছেন মহম্মদ মুসা করিম।
আবার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে থেকেই অন্য একটি মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবেও চাকরি করেছেন তিনি। তু্লেছেন বেতনও। এছাড়াও নিয়োগ ছাড়াই এক নারীকে অফিস সহকারী হিসেবে শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানবেজে নাম দেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসা করিমের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের অভিযোগে তাকে শোকজ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে সোয়া ৪টার দিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে শোকজ করা হয়েছে। চিঠিতে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নে অবস্থিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে নন এমপিও কুমারখালীর চাঁপড়া ইউনিয়নের ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মহম্মদ মুসা করিম। এরপর ২০১৫ সালে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন তিনি। এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক সহকারী শিক্ষক ( গনিত) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যার ইনডেক্স নম্বর – এম ০০২৭৩৯৫। এনটিআরসিএ নিয়োগ নিয়ে তিনি ২০২২ সালের ৩০ জানু্য়ারি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ওই বছরের মে ও জুন মাসের বেতন উত্তোলন করেন তিনি। এরপর শারীরিক অসুস্থতা ও প্রতিষ্ঠানের দুরত্ব উল্লেখ করে ২০২২ সালের ৩০ জুন ওই মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

আরো জানা গেছে, ২০২২ সালের ৬ জু্লাই ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়। সেসময় থেকে তিনি এই বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত উপস্থিত হন। তবে অবৈধভাবে অতিরিক্ত বকেয়া বেতন তোলার জন্য ভুয়া রেজুলেশন করে অত্র বিদ্যালয়টিতে তাঁর নিয়োগ দেখানো হচ্ছে ২০০৩ সাল। যা শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানবেজে নেই। এছাড়াও নিয়োগপত্র ছাড়াই মোটা অংকের ঘুষ লেনদনের মাধ্যমে প্রিয়া সুলতানা নামে এক নারীকে অফিস সহায়ক হিসেবে নাম দিয়ে রেখেছেন তিনি।

জানতে চাইলে গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুল আলিম বলেন, ২০২২ সালের ৩০ জানু্য়ারি সহকারী শিক্ষক হিসেবে মহম্মদ মুসা করিম তাঁর প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছিল। দীর্ঘ পাঁচ মাস নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আসতেন। ওই বছরের মে এবং জুন মাসের বেতন উত্তোলন করে ৩০ জুন পদত্যাগ করে চলে গেছেন আগের বিদ্যালয়ের স্বপদে।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফোনে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, শোকজের বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অভিযোগ গুলোর উত্তরে শোকজের জবাবে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

এর আগে সোমবার (৩০ জুন) দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে পতাকা উড়ছে। প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা কার্যালয় কক্ষে বসে আছেন। প্রতিবেদকের পরিচয় জানতেই প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসা করিম তাঁর স্মার্টফোনে ভিডিও ধারণ শুরু করেন এবং রুক্ষ ভাষায় প্রতিবেদককে ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলতে নিষেধ করেন।

এ সময় একই সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও বেতন তোলার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসা করিম। তিনি বলেন, ২০০৩ সাল থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। নন এমপিও বিদ্যালয় হওয়ায় মানবেতর জীবন কাটছিল তার। সেজন্য এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে একটি মাদ্রাসায় কিছুদিন চাকরি করেছেন তিনি। দুই মাসের বেতনও তুলেছেন। পরে সেখান থেকে পদত্যাগ করে বিদ্যালয়ে ফিরে আসছি।

একই সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা নিয়ম বহির্ভূত কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক বলেন, নন এমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়মের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যায়।

ব্যানবেজে ২০১৩ সালে সহকারী শিক্ষক এবং ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যানবেজে ভুল আছে। ২০০৩ সালেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ তাঁর।

নিয়োগ ছাড়াই অফিস সহকারী পদে প্রিয়া সুলতানার নাম ব্যানবেজে কিভাবে আসল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু দিন ওই নারী বিদ্যালয়ে আসতেন। ভুল করে ব্যানবেজে নাম চলে যায়। বর্তমানে ব্যানবেজ থেকে নাম সরানো হয়েছে। বিদ্যালয়েও আসেনা আর।

এ সব অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলে জানিয়েছেন ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ৫ আগষ্টের পরে বিদ্যালয়ের দাঁয়িত্ব নিয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী এক সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ নেই। খুব দ্রুতই অভিযোগ গুলো ক্ষতিয়ে দেখে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।

প্রতিষ্ঠান যেমনই হোক। নীতিমালা অনুসারে এক ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বা বেতন তোলার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক। তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় তাকে কারণ দর্শাও নোটিশ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিবেন। জবাব সন্তুষ্ট না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের অভিযোগ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিটি অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখা হবে। কোনো অনিয়ম থাকলে বিধিমতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।