শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা(খুলনা): ১৯৭১ সালে স্থানীয় হানাদার (রাজাকার) ক্যাম্প পতনের পর গণরায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত খুলনার পাইকগাছায় আলোচিত এক রাজাকারের পারিবারিক বাৎসরিক দোয়া অনুষ্ঠান মাদ্রাসা অধ্যক্ষ কর্তৃক পরিচালনার ঘটনায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীণ দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান রাজাকার ঘাঁটি পতনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৯ ডিসেম্বর রাজাকারদের আতœসমর্পণের পর উপস্থিত লাখো মুক্তিকামী মানুষের গণরায়ে মতান্তরে ১৫১ জন রাজাকারের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। যার মধ্যে উপজেলার নোয়াকাটি গ্রামের আফসার সরদার ছিলেন অন্যতম। ঘটনার পর থেকে প্রতিবছর পারিবারিকভাবে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ও ২২ ডিসেম্বর পৃথকভাবে আয়োজিত পারিবারিক দোয়া অনুষ্ঠান দু’টি পরিচালনা করেন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কপিলমুনি জাফর আউলিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মাও: আব্দুস সাত্তার। দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি নিহত রাজাকার আফসারকে শহিদী মর্যাদার সাথে তুলনা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনার কথা স্বীকার করলেও শহিদী মর্যাদার বিষয়টি এমনকি আফসারের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি বলে দাবি করেন।
এসময় একজন মানুষের দোয়া কামনায় দু’দুটি অনুষ্ঠান পরিচালনায় তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও মৃত ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করেননি কেন? তাহলে তিনি কি জানতেন যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি কোন দোয়া অনুষ্ঠানে কোন একজন নয়, মূলত সকল মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাত কামনা করে থাকেন বলে দাবি করেন।
এদিকে যুদ্ধকালীণ দেশের একমাত্র গণআদালতে ধৃত রাজাকারদের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির দোয়া অনুষ্ঠানে কোন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ’র দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে এলাকায় ব্যাপক তোড়পাড় সৃষ্টি হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে তার ভূমিকায় প্রশ্নবিদ্ধ করেছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধসহ স্বাধীনতার পক্ষের সচেতন এলাকাবাসীকে। ঘটনায় তারা অধ্যক্ষকে অপসারণসহ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে।
দৈনিক দেশতথ্য/এসএইচ//