শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ॥ পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনরোধে এখন পর্যন্ত পাউবো ২০১০-২০ অর্থ বছরে তাদের নক্শা অনুযায়ী ৭০ মিটার ভাঙ্গন এলাকায় জিও ব্যাগ প্রদানে ২২ লাখ ও ২০১৮- ১৯ অর্থ বছরে ২৯০ মিটার কাজের জন্য ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে টেকসই বাঁধ নির্মাণে চাহিদা পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হলেও ঠিক কবে নাগাদ বরাদ্দ হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে ভাঙ্গন প্রতিরোধে উপজেলার রাড়–লীতে স্থানীয় দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে মানববন্ধনের ডাক দিলেও প্রশাসনের পূর্ব অনুমতি ছাড়াই কর্মসূচী দেওয়ায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শত শত পরিবার নানা আশংকায় নির্ঘুম রাত জেগে নিজ নিজ ঘর পাহারা দিচ্ছেন।
কপোতাক্ষ নদে ভাঙ্গা-গড়ার খেলা শুরু হয়েছে ৯০’র দশক থেকে। ভয়াবহ ¯্রােতের মুখে নদের একদিকে যেমন ভাঙ্গন চলছে অন্যদিকে নাব্যতা হারিয়ে পরিণত হয়েছে মরা খালে। এরফলে কপোতাক্ষের বিস্তির্ণ এলাকায় পানি সরবরাহের পথ রুদ্ধ হয়ে হাজার হাজার পরিবার বর্ষা মৌসুমে রীতিমত পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পানি নিষ্কাশনে নদী খনন বাস্তবায়নে নদী পাড়ের মানুষ বিভিন্ন এলাকায় রাজপথে আন্দোলনে নেমে পড়েন। সরকার কপোতাক্ষ খননে ২৬২ কোটি টাকা ব্যায়ে নদী খনন করলেও নানামুখী সংকটে মৌসুমের পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলেও এর টেকসই সফলতা আসেনি।
নাব্যতা হারিয়ে অনেক এলাকায় চরভরাটি জমি জেগে উঠেছে। তার দখল নিয়ে যেমন কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে,অন্যদিকে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের মুখে সর্বশান্ত হচ্ছেন অন্য প্রান্তের মানুষ। উপজেলার রাড়ুলী জেলে পাড়ায় প্রায় দেড় শ’ পরিবারের বসবাস থাকলেও কপোতাক্ষের অব্যাহত ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি হারিয়ে শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। সর্বশেষ ভাঙ্গনের মুখে সেখানকার ৪০টি পরিবার নির্ঘমপ্রায় রাত কাটাচ্ছেন।
ভাঙ্গনের মুখে উপজেলার কপিলমুনির আগড়ঘাটা, বিরাশি, ভোদামারী, হরিঢালীর রামনাথপুর, মালত, সোনাতনকাটি, কাশিমনগরের বহু মানুষ ভাঙ্গনের মুখে নি:স্ব হয়েছেন। সার্বশেষ ভাঙ্গনে রাড়–লীর মত সীমান্তের কাশিমনগর জেলে পাড়া ও কাশিমনগর বাজার এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নদী খননের পর উচ্ছিষ্ট মাটিতে সৃষ্ট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে বনবিভাগের বনায়ন প্রকল্পের বহুগাছ নদীতে ধ্বসে পড়েছে। বাজারের মুল ভূ-খন্ডে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। এমন পরিস্থিতিতে জেলে পল্লীর বহু পরিবারের পাশাপাশি কাশিমনগর বাজারটি ফের ভাঙ্গনের মুখে চরম অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ভাঙ্গনকূলে জিও ব্যাগে বালু ভরে ভাঙ্গন প্রতিরোধে গত দু’ অর্থ বছরে বছরে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন স্থানীয় খুলনা-৬ সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু। তবে সরেজমিনে স্থানীয়রা বলেন, ঠিকাদার লোক দেখানো সামান্য কাজ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখান।
এদিকে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী ও টেকসই ভূমিকায় ৩ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে উপজেলার রাড়–লীর স্যার পিসি রায় স্মৃতি সংসদ ও রাড়লি ইউনিয়ন চাকুরিজীবি মানবকল্যান সোসাইটি গত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে ভাঙ্গন এলাকায় মানবন্ধনের ডাক দিলে শ’শ লোক হাজির হয় নদী পাড়ে। তবে প্রশাসনের পক্ষে পূর্ব অনুমতি না নিয়ে কর্মসূচী দেওয়ায় আকষ্মিক তা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান, ভূক্তভোগী এলাকাবাসীর পাশাপাশি আয়োজকরা।
স্থানীয় রাড়–লী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার মজিদ বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দুটি মন্দিরসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কপোতাক্ষে বিলীণ হয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে দেড় শতাধিক পরিবার এলাকা ছাড়া হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার জানান, ভাঙ্গন রোধে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বোর্ডের নক্সা অনুযায়ী ৭০ মিটার ভাঙ্গনে জিও ব্যাগভরাটি বালু ফেলতে ২২ লাখ টাকা ও ২০১৮- ১৯ অর্থ বছরে ২৯০ মিটার কাজের জন্য ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। আগামীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই মানব করার উদ্যোগে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাউবোকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Discussion about this post