Print Date & Time : 6 May 2025 Tuesday 4:16 pm

কর্ণফুলীতে আ.লীগের ওয়ার্ড কমিটিতে পদত্যাগের হিড়িক

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার পরপরই পদ পাওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে পদত্যাগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

আর এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান তালুকদার এর ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূেল নেতাদের কেউ কেউ। কেননা, গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ। যা সরাসরি গঠনতন্ত্র বিরোধী বলে জেলার অনেক রাজনৈতিক নেতারা মন্তব্যে জানান।

জানা যায়, গত ১৯ বছর পর তৃণমূলে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হলেও বড়উঠান, জুলধা, চরলক্ষ্যা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন নেতাকর্মীরা। ১৫ অক্টোবর কমিটি ঘোষণা করা হলে, তার দুই দিন পর ১৭ অক্টোবর পদত্যাগ করতে শুরু করেন।

এতে অপ্রত্যাশিত কমিটি মেনে নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন-শিকলবাহা ৪নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিঠু, ত্রাণ ও সমাজ ক্যালণ সম্পাদক মো. সোনা মিয়া, সদস্য সোলায়মান, জমিল, সদস্য আবু তালেব মেম্বার, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন চরপাথরঘাটা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ রনি। শিকলবাহা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সম্পাদক লোকমান হাকিম পদত্যাগ করে লিখেন, ‘সিনিয়র জুনিয়র বা রাজনৈতিক পারফরম্যান্স বিবেচনা না করে না জানিয়ে আওয়ামী লীগের কমিটিতে নাম দেওয়া ষড়যন্ত্র বা অপমান জনক মনে করি। এসব বিশৃঙ্খলা রাজনৈতিক কর্মকান্ড ঘৃণার সহীত প্রত্যাখন করলাম।’

ওদিকে, একই ব্যক্তিকে দুই পদ দেওয়া হয়েছে। এতে জুলধা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ ক্যালণ বিষয়ক সম্পাদক করা হয় শামসুল আলম কে। তাঁকে আবার শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও কমিটিতে দেখানো হয়েছে। ফলে, নানা অনিয়মে জুলধা ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মো. নুর, জেবুর হোসেন, নুর আলম, এমডি কবির আহমেদ, আলী আকবর ও মো. খোকন। এদের একজনের অভিযোগ, গত ২০০৭ সাল থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসলেও নতুন কমিটিতে তাঁকে সদস্য করা হয়েছে। তাই তিনি তামাশার কমিটি আখ্যায়িত করে পদত্যাগ করেছেন। চরলক্ষ্যা ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম এ বাহাউদ্দীন পদত্যাগ করেন।

জানা গেছে, নবগঠিত এসব ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটিতে অযোগ্য, বিএনপির সঙ্গে আঁতাতকারী ও নিষ্ক্রিয়দের পদায়ন করা হয়েছে। কমিটিতে ত্যাগী ও আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি থেকে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন এবং কমিটি করার ক্ষেত্রে আর্থিক কোন লেনদেনের অভিযোগ করেনি কেউ। তবে দীর্ঘদিন যারা দলের জন্য কাজ করেছেন তাদের কে বাদ দিয়ে কিংবা যোগ্যতা অনুযায়ি পদায়ন না করার অভিযোগ তুলেছেন বেশির ভাগ। আর এ কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ পদত্যাগকারীরা।

কেননা, পদত্যাগকারীরা জানিয়েছেন, যাকে পদ দেওয়া হয়েছে, তাঁর নাম, পিতার নাম, মোবাইল নম্বর ও কোন বাড়ির তা উল্লেখ্য না করেই নাম ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে কমিটিতে। এতেই নানা জটিলতা তৈরি হয়। ফলে, ওয়ার্ড কমিটির অন্তত ডজন ডজন নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ নিজ আইডি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করেছেন। হঠাৎ এমন পদত্যাগের ঘটনায় স্বয়ং জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতারাও বিব্রত হচ্ছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান তালুকদার বলেন, ‘বিতর্কিত কেউ কমিটিতে আসে নাই। যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন, তারা কেউ কেউ হয়তো পদ না পেয়ে অভিমানে পদত্যাগ করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় উপরের নির্দেশে আমরা এসব কমিটি ঘোষণা করেছি।’

কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু বলেন, এসব বিষয়ে আপনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলেন।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//