জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম: নদীতে থাকা জাহাজ থেকে আমদানি স্ক্র্যাপ চোরাই পথে বিক্রি নিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর শিকলবাহা ‘তাতিয়া পুকুরঘাট’ এলাকায় প্রতি রাতে ঘটছে তুলকালাম কাণ্ড। চোরাকারবারিদের ভাষায় লোহা অ্যালুমিনিয়ামের এসব স্ক্র্যাপ গুড়াকে বলা হয় ‘চানাচুর’। একদিন আগেও ‘এমটি আল বাহার’ নামক জাহাজ থেকে শত শত বস্তা ‘চানাচুর’ নামানো নিয়ে রাতে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার ঘটে।
শিকলবাহা তাতিয়া পুকুরঘাটের অপর একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘এ ঘাটে মূলত এরশাদ, নাজিম, সোহেল ও পিন্টু (সিন্ডিকেট) গ্রুপ চোরাই পণ্য তোলেন। তাদের মধ্যে বনিবনা হলে নীরবে কাজ চলে। আবার দুই পক্ষ মিল না হলে নদীতে নৌ পুলিশের অভিযান ও স্থলে ফাঁড়ি পুলিশের টহল দেখেন লোকজন। এসব কাজ মূলত যারা করেন তারা সকলেই প্রভাবশালী। যাদের নাম উপরে বলা হয়েছে তাদের ঠিকানা ও পিতার নাম জানা যায়নি। কারণ এলাকার কেউ সহজে তাদের বিষয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিকলবাহা-ভেল্লাপাড়া শাখা খাল, দক্ষিণ পাড়ের নতুন ব্রীজের নিচ, তাতিয়া পুকুর পাড়, শিকলবাহা ব্লকের পাড়, ভেল্লাপাড়া ব্রীজের নিচ, শিকলবাহা খাল সংলগ্ন প্রতিটি জেটিতেই রাতে সময় সুযোগ করে লাখ লাখ টাকার চোরাই মালামাল আনলোডিং হচ্ছে। ঘাটে চোরাই পণ্য নিয়ে চলে ‘চোর-পুলিশ খেলা’।
প্রভাবশালী সিন্ডিকেটরা এসব চোরাই পণ্য লোড-আনলোডে প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছেন। ফলে বাড়ছে সংঘর্ষের আশঙ্কাও। মূলত এসব পণ্য চুরির সাথে শুধু চোরাকারবারী, জাহাজ মাস্টার, সুপারভাইজার ও লস্কর জড়িত নন, তাদের সাথে জড়িয়েছে ঘাটকুল সংলগ্ন এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারাও। যাদের কোন দৃশ্যমান ব্যবসা নেই। কিন্তু অল্প দিনেই তারা কোটিপতি। ঘাটে ঘাটে এদের ম্যানেজ করে চলে স্ক্র্যাপ ব্যবসা। সাথে নামছে সয়াবিন, ডিজেল, সার, গম, চিনি, ভুট্টাসহ নানা ভোগ্যপণ্য।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাসোয়ারা দিয়ে প্রকাশ্যে নদী পথে চোরাইপণ্যের এ ব্যবসা করছেন এমন অভিযোগ বরাবরেই অস্বীকার করেন নৌ পুলিশ ও ফাঁড়ি আইসিরা। তবে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়িতে নতুন আইসি যোগদানের পর থেকে এলাকার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছেন মাষ্টারহাট ও কালারপোল এলাকার লোকজন।
এর মধ্যে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি একটি বার্তা দিয়েছেন যে, ‘শিগগরই শিকলবাহা এলাকার সবকটি ঘাট ও নতুন ব্রিজের নীচে পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। অফিসে বসে পুলিশ সব ঘাট গুলো দিনে রাতে মনিটরিং ও নজরদারি করবেন। যাতে অপরাধ ও চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণে আসে।’
যদিও নৌ পুলিশ ও থানা পুলিশের একটি অধিক্ষেত্র রয়েছে। পরস্পরে তাঁরা বলছেন সাগরে কিংবা নদীতে চোরাই পণ্য খালাস হলে নৌ পুলিশ বা কাস্টমস বিভাগ দেখে থাকেন। আর স্থল ভাগের ঘটনা বা ঘাটে চোরাই পণ্য উঠলে স্থানীয় থানা পুলিশ দেখেন। কিন্তু নৌ পুলিশের পরিপত্রে রয়েছে, নদী, হ্রদ বা নৌ পথের সর্বোচ্চ পানি স্তর যে স্থানে ভূমি স্পর্শ করে উক্ত স্থান হতে ভূ ভাগের দিকে ৫০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা নৌ পুলিশের। তাঁর মানে ঘাট কুলের ৫০ মিটার ভূমি এলাকায়ও নৌ পুলিশ অভিযান চালাতে পারবেন।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কেউ কথা বলতে রাজি না হলেও যোগাযোগ করে জানতে চাইলে সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. একরাম উল্লাহ বলেন, ‘আমদানিকৃত পণ্যের চোরাই বন্ধে কর্ণফুলী নদীতে নৌ পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নৌ পুলিশের টহল জোরদার ও অপরাধ বন্ধে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। যখনই কোন না কোন খবর পাই সাথে সাথে স্পটে নৌ পুলিশ পৌঁছানো হয়।’
শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) এসআই মোবারক হোসেন বলেন, ‘নদীতে চোরাই পণ্য উঠানামার ঘটনা ও ঘাটের নানা অপরাধ বন্ধে ৬ টি সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আবেদন করেছি। শিগগরই তাতিয়া পুকুর ঘাট ও নতুনব্রিজের নীচে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। যদিও নদীতে চোরাবারীর ঘটনা ঘটলে সেটা দেখার দায়িত্ব নৌ পুলিশের, ফাঁড়ি পুলিশের নয়। তবুও শিকলবাহা পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে সব সময় আইনি ব্যবস্থা নিবে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//,