৩৬ বছর আগে অধিগ্রহন করা জমি আজও নাম খারিজ করে সওজের নামে করা হয়নি। এরই সুযোগে আগের মালিকদের সাথে যোগসাজোস করে দলিল মূলে ব্যাক্তি মালিকানায় খতিয়ান করে নিচ্ছেন অনেকেই। এভাবেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধিগ্রহণ করা জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী এই কাজটি বেশ জোরে শোরেই করে চলেছেন। এমন একটি কবলা তৈরীতে সহযোগি ছিলেন নগরীর মনছুরাবাদ এলাকার মোছাম্মৎ ইয়াছমিন বানু।
এ নিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিকলবাহা এলাকার শাহ এমরান নামের এক ব্যাক্তি। অভিযোগে বলা হয়েছে নামজারি ও জমাভাগ মোকদ্দমা-২৯৭৬/১০ইং গত ২০১০ সালের ১৯ মে মাসের আদেশমূলে মোহাম্মদ আলী’র নামে সৃজিত চরপাথরঘাটা মৌজার বিএস ১২১৯ নং নামজারি ও জমা ভাগ খতিয়ান বাতিলের।
অভিযোগ ও নথি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা মৌজার বিএস-১২১৯ এর বিএস ১৪২৪ দাগের এবং বিএস ৩৮ নং খতিয়ানের বিএস ১৬৪ দাগের ৬১ দশমিক ৫ শতক জমির অধিগ্রহণ মূলে মালিক সওজ।
এ জমির উপর শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর সংযোগ সড়ক রয়েছে। কিন্তু পটিয়ার মোহাম্মদ আলী ও নগরীর ইয়াছমিন বানু যোগসাজস করে জান কবলা সৃজন করে সত্য গোপন করেছেন। ্মন কথাই বলেছেন ওই আবেদনকারী।
অভিযোগে আরও জানায়, একই জমি এল.এ ৬২-১৯৮৭/১৯৮৮ নম্বর কবলা মূলে ৪ শতক ও এল.এ মামলা নম্বর ১৫-২০০৫/৬ নম্বর মামলায় ১৬ শতক করে মোট ২০ শতক জমি সরকার অধিগ্রহণ করে নেন সওজের পক্ষে। এতে প্রায় তৎকালিন ১৯ লাখ টাকা গ্রহণ করেন জমির পূর্ব মালিকরা।
নথি সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়, চট্টগ্রাম মনছুরাবাদ এলাকার মোছাম্মৎ ইয়াছমিন বানু পটিয়া ২য় সহকারি জজ আদালতে রমিজ আহাম্মদ গংদের অপর মোকাদ্দমায় ১৫ বছর আগে স্বীকার করেছেন। আয়েশা খাতুন নামক এক নারীর নামে বিএস জরিপ চূড়ান্ত হয়। পরে আয়েশা খাতুনের ওয়ারিশ নাতি আজিজুর রহমান মানে মোহাম্মদ আলীর ছেলে ১৬ শতক জমির বিপরীতে এল.এ হতে টাকাও গ্রহণ করেন।
এতে আয়েশা খাতুন কিংবা ইয়াছমিন বানুর সম্পূর্ণ সম্পত্তি সরকার হুকুম দখল করিয়া নেওয়ার পরও গত ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ ৫২৪১ নম্বর কবলা সৃজন করেন। ওই কবলা মূলে ১৬ শতক জমি বাদ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন মোহাম্মদ আলী। পরে নানা ঘটনা শেষে অপর মামলা ২৩/২০১৪ ইং সালে রায় ডিগ্রী হয়। কিন্তু মোহাম্মদ আলীর ভূমি সড়ক ও জনপদ বিভাগের রাস্তার হলেও অভিযুক্তরা এসব জমি পূনরায় বিক্রি করার জন্য খতিয়ান তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ তোলেছেন শাহ এমরান। এতে ভূক্তভোগী ৭ বছর যাবত পটিয়া উপজেলা ভূমি অফিস ও কর্ণফুলী ভূমি অফিসে বারবার অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
অথচ ভূমি অধিগ্রহণ আইন-২০১৭ অনুযায়ী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর নেতৃত্বে ভূমি অধিগ্রহণ অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অবশ্যই অধিগ্রহণের জন্য নির্বাচিত জমিতে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে যাবেন। তারপর তারা জমিতে, ‘এই জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে’ এমন একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিবেন। অফিস তারপর প্রকৃত জমির মালিককে অর্থ প্রদান করবে। কিন্তু এত নিয়ম ভেদ করে কিভাবে প্রকৃত মালিক তার অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা পাচ্ছেন না। তার সঠিক উত্তর জানা যায়নি।
তবে শিকলবাহা এলাকার ভূক্তভোগী শাহ এমরান বলেন,‘এটি অবিশ্বাস্য। আমার জমির সমস্ত বৈধ কাগজপত্র আছে, তবুও ওই চক্রটি কিভাবে খতিয়ান করলো ? আবার অতীতে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার এবং জেলা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের লোকদের ম্যানেজ করে কিভাবে জমির অর্থও হাতিয়ে নিয়েছেন তা আমার জানা নেই। আমার জমি মোহাম্মদ আলী খতিয়ান করেছেন। এটা বাতিলের জন্য আবেদন করেছি।
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমকিভাবে মনে হচ্ছে অভিযোগ যৌক্তিক। খতিয়ান বাতিলের আবেদন করেছেন। আমি শুনানি করে দেখব। প্রকৃত জমির মালিক যেন তার জমি ফিরে পায়।’
এ প্রসঙ্গে সওজের দোহাজারী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ দৈনিক দেশতথ্যকে বলেন, অতি শিঘ্রই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। জমির কাগজ ঠিক করার কাজ শুরু করেছি। এটা করে ফেলতে পারলে আর কেউ সওজের জমি নিতে পারবে না।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ০৭,২০২৩//