চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। হারের ব্যবধান দু’এক ভোট হলে কথা ছিলনা। ১ হাজার ৬৭৩ ভোটে হেরেছেন নৌকার প্রার্থী। এজন্য এ নিয়ে শুরু হয়েছে চুল চেরা বিশ্লেষণ।
সার সংক্ষেপঃ নৌকা হারলে কেন্দ্রে বর্তমান মন্ত্রীর জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সহজ হবে। আওয়ামী লীগ নেতা ও যুবলীগ নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। নৌকার কার্ড দেখলেই পুলিশ ধাওয়া দিয়েছে। টাকার কাছে নীতি-আদর্শ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে নৌকার পরাজয় হলে আগামী দিনে কি হতে পারে তা নিয়ে শঙ্কায় আওয়ামী নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন জনসমর্থন নয় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কারনেই হেরে গেছে নৌকা।
যে এলাকায় নৌকা পরাজিত হয়েছে সেটি একজন মন্ত্রীর এলাকা। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, গুটিকয়েক যুবলীগ নেতার উপর ভরসা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও নৌকা হোঁছট খেয়েছে। এর কারণ হলো-সেলিম হকের নৌকা মনোনয়ন পাওয়া তাঁদের সহ্য হয়নি। তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থেই নৌকা ফুটো হয়েছে। তাঁরা সবাই সুকৌশলে চেষ্টা করেছেন নৌকাকে ঠকাতে। তাই হয়েছে।
কী ধরনের কোন্দল আছে-জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও যুবলীগ নেতাদের মধ্যে প্রকাশ্যে ও পরোক্ষভাবে গ্রুপিং আছে। উপরে সবাই সবার জানপ্রাণ কিন্তু ভেতরে অন্তঃসারশূণ্য। কর্ণফুলীতে নৌকা হারার পেছনে সেটি অন্যতম কারণ বলে মনে করি। কারণ ওখানে নৌকা হারলে কেন্দ্রে বর্তমান মন্ত্রীর জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সহজ হবে।
এতে লস হলো আমাদের। আমরা জন্ম থেকে আওয়ামী লীগ করে আসছি। এই চরপাথরঘাটায় প্রধানমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রী এত উন্নয়ন করেছেন, তারপরও আমরা নৌকাকে ডুবিয়ে দিলাম। এর জন্য কষ্টও হয়। দুঃখও হয়।
চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আরেক বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় বিভেদ পরাজয়ের একটা কারণ।
তার এ দাবি অস্বীকার করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা বলেন, ‘তৃণমূল যা বলছে তা সত্য নয়। দলীয় কোন্দল থাকলেও বিপক্ষ প্রার্থীর অঢল টাকার কারণেই নৌকা পরাজিত হয়েছে। প্রার্থী সিলেকশনে কোনো ভুল ছিল না।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সাজিদ বলেন, ‘টাকার কাছে নীতি-আদর্শ মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেলিম হককে হারিয়ে দিতে নীতি আদর্শকে গলাটিপে দিলেন। আমার ২ নং ওয়ার্ডে ৯২১ ভোট পেয়ে নৌকা জয় লাভ করলেও সেলিম ভাইকে হারতে হয়েছে কিছু অর্থ আর স্বার্থলোভী মানুষের জন্য। জানি না কেন নৌকার কর্মীদের প্রশাসনের ধাওয়া খেতে হয়েছিলো বারবার। দুইজন আহত হয়েছেন।
বাদশা মিঞা বাদল নামে এক নৌকার কর্মী বলেন, ‘পুলিশ নৌকা কার্ড দেখলেই দৌঁড়াইছে।’ মোঃ আজিজ নামে আরেক ছাত্রলীগকর্মী বলেন, নির্বাচনের সময় কোন কোন নেতা পুলিশ প্রশাসন এর সাথে সমন্বয় রাখার দায়িত্ব ছিলেন ওদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। কেন নৌকার কর্মীদের বারবার পুলিশ ধাওয়া দিলো। আমরা হাজারবার বলেছিলাম, ওরা দুইজন মিলে চেয়ারটা কেড়ে নিবে। নৌকাডুবির বিষয়ে মন্তব্য জানতে যুবলীগ সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তারা কল রিসিভও করেননি কল ব্যাক দেননি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, দল ক্ষমতায় থাকলেও নেতারা হয়তো সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকেন নি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যখন প্রার্থীর তালিকা চেয়েছিলেন, তখন জেলা আওয়ামী লীগ তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠায়। তৃণমূলের মতামত নেওয়া হয়নি।
নৌকার প্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম হক বলেন, পরাজয় নিয়ে কিছু বলার নেই। কেননা, দলের ভেতরের কথা বাহিরে বলতে নেই। কর্মী সমর্থক ও জনসাধারণের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা যে পরিমান ভোট দিয়েছেন তাতেই আমি খুশি। আল্লাহ হয়তো আমার কপালে রাখেননি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্ধীতা, জয় পরাজয় থাকবেই। সব পরিহার করে আগামী দিনের কথা চিন্তা করতে হবে। নির্বাচিত সকলকে অভিনন্দন ও পরাজিতদের প্রতি সমবেদনা ও আগামীর জন্য কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ১৭,২০২২//

Discussion about this post