Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 12:15 am

কর্ণফুলীতে রিকশা চালক খুন: ৪৩ দিনেও শনাক্ত হয়নি খুনি

জে. জাহেদ, (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে অটো রিকশা চালক মো. আজিবুল ইসলাম আরিফ (১৮) খুনের ঘটনার ৪৩ দিন পেরিয়ে গেলেও খুনিকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।গত ১২ জানুয়ারি ভোর রাতে চরলক্ষ্যার তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান সড়কের পাশের ধান ক্ষেতের জমিতে ঘটনাটি ঘটে।

এমনকি খুনিদের শনাক্তে পুলিশ ঘটনার আশেপাশ কর্ণফুলীর পুরাতন ব্রিজঘাট ও চরপাথরঘাটার অর্ধশতাধিক সিটিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি স্বয়ং থানা পুলিশ, পিবিআই ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশও কাজ করছেন।

ওদিকে, আরিফ খুনের এক মাস যেতে না যেতেই গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়নের মো. নাজেম (৪৮) এর একতলা বাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

এতে ডাকাতেরা পরিবারের সবাইকে হাত পা বেঁধে রুমে আটকে রেখে প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণ, দুই লক্ষ নগদ টাকা, দুটি মোবাইল ফোনসহ কাপড় চোপড় লুট করে নিয়ে যান।

কর্ণফুলীতে নতুন ওসি হিসেবে মো. জহির হোসেন যোগদানের পরপরেই এ দুটি ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে হত্যা ও ডাকাতির ঘটনা ‘ক্লুলেস’। কেউ আটক বা গ্রেপ্তার নেই।

জানতে চাইলে খুন হওয়া রিকশা চালক আরিফ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপি কর্ণফুলী থানার এস আই আবুল কালাম বলেন, ‘ঘটনার পরপরেই ৫০টিরও অধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হলেও স্পষ্টত কোন তথ্য মেলেনি। এমনকি সন্দেহজনক ১০ জনের অধিককে থানায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোন ক্লু মেলেনি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ ও রিকশায় কিছু চিহ্ন রয়েছে। যা চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। যেহেতু হত্যা মামলা। নিশ্চিত না হয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।’

এ ঘটনায় ভিকটিম আরিফের মা শাফিয়া বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি রেখে সিএমপির কর্ণফুলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার জিআর মামলা নং-১৭।

অপরদিকে, জুলধায় ডাকাতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আবু সাঈদ রানা বলেন, বসত বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় এখনো পর্যন্ত বলার মতো কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। আটক বা গ্রেপ্তার কেউ নেই। তবে পুর্বের ডাকাতি মামলা ও পুলিশ সব দিক বিবেচনা করে তদন্ত করছেন। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যদিও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি এখনো হয়নি।’

এ ঘটনায় বাড়ির মালিক মো. নাজেম বাদি হয়ে ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামি করে মামলা করেন। যার জিআর মামলা নং-২৭। এ মামলায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারী আনোয়ারা বিলপুরের নুর মোহাম্মদ (৩৫) একজনকে সন্দেহজনক গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুদিনের রিমান্ডে নিলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদি নাজেম বলেন, ‘পুলিশ পরিচয়ে তার বাড়িতে ডাকাতি করা হয়েছে। ডাকাতরা সব ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। সবার হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিলো। সবার মুখে মাস্ক, হাফ প্যান্ট, গায়ে হাফ হাতা গেঞ্জি, পায়ে ও হাতে মোজা। মাথায় পাগড়ির মত গামছা বাঁধা ছিল।’

জানা যায়, কর্ণফুলীর এই দুটি ঘটনায় ছায়া তদন্ত হিসেবে মাঠে নেমে কাজ করছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের একাধিক টিম। তবে হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির রহস্য ভেদ করতে তাঁরা সকলেই এখনো ক্লুলেস। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে কর্ণফুলী জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের একাধিক টিম জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। দুটিই ক্লুলেস ঘটনা তাই একটু কষ্ট হচ্ছে। যেহেতু লেগে আছি সত্য বের হবেই। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন আপডেট নেই।’

বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা জানান,’পুলিশ খুব সূক্ষ্মভাবে এ হত্যা মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা খতিয়ে দেখতে একাধিক টিম বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে তদন্তের কাজ করছে। ইতিমধ্যে আমরা অনেক তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি; সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। খুনের রহস্য উদঘাটন হবেই আর খুনিরাও ধরা পড়বে। আর ডাকাতির ঘটনার ও কাজ চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন তথ্য নেই বলার মতো।’

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//