নদী ও তীর দখল করে গড়ে উঠা ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিতে মাঝিদের অনশনকাক ডাকা ভোরে কর্ণফুলীর অভয়মিত্র ঘাটে জড়ো হয়েছে শতাধিক সাম্পান মাঝি ও চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনসহ পাঁচ সংগঠনের কর্মীবৃন্দ।
বুধবার সকাল ৭টার আগেই দুই শতাধিক সাম্পান একত্রিত হয় চাক্তাই খালের মোহনায়। নদীর মাঝখানে সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত লাগাতার ৮ ঘণ্টা অনশন করেছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনসহ ৫ সংগঠন।
নিজেদের খেয়াপারাপার বন্ধ রেখে একের পেছনে এক সাম্পান বেধে দপ্ত রোদেও অটল ছিলেন তারা। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে মাঝিরা এক সূরে চিৎকার করে বলেছেন ২০১৯ সালে হাইকোর্ট প্রদত্ত চূড়ান্ত রায় অনুসারে নদী ও তীর দখল করে গড়ে উঠা ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবে না।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী তীরে টিকে থাকা আড়াই শতাধিক বনজ ও ঔষধি গাছ সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় আদালতের আদেশ অবমাননার অভিযোগ এনে যথাযথ আদালতে রিট আবেদন করা হবে। যার প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে।
অনশনে একাত্বতা ঘোষণা করে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী বলেন, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদী দখল দূষণ করে পঙ্গু করা হচ্ছে। দূষণে ৭০ প্রজাতির মাঝ বিলুপ্ত হয়েছে। নদী ও তীর দখল করে গড়ে উঠেছে একের পর অবৈধ স্থাপনার জঞ্জাল। দেখার কেউ নাই। তাহলে কি আমরা ধরে নিব এই দেশে প্রশাসন নেই। আমরা আজকে দ্যর্থ কণ্ঠে বলতে চাই আগামি ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করুন। না হয় আপনাদের তা করতে বাধ্য করা হবে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের উপদেষ্টা মেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নোমান আহমদ সিদ্দিকি বলেন, প্রাচ্যের রাণী কর্ণফুলী বাংলাদেশের প্রাণ প্রবাহ। লুসাই সৃষ্ট কর্ণফুলীর বাকে বাকে রয়েছে নান্দনিক বৈচিত্রতা। অতিতের নির্মল স্বচ্ছ কর্ণফুলী এখন দখল ও দূষণে মারা পড়ছে। ৪০ লক্ষাধিক মানুষের বর্জ্য কর্ণফুলীতে পড়ছে। যেটা মেনে নেয়া যায় না। দশ বছর আগের ৯১০ মিটারের কর্ণফুলী এখন ৫১০ মিটার। আজকে মৃতপ্রায় কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা অচিরেই উচ্ছেদ করতে হবে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, আমাদের এক কথা এক দাবি হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে। কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা আগামী পনের দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করতে হবে। জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালে জরিপ করে চিহ্নিত অবৈধ স্থাপনা ভূমি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নদী কমিশনের ওয়েব সাইডে ঘোষিত। তারপরও তা কেন উচ্ছেদ হবে না।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ২১৮১ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও তা সাড়ে তিন বছরেও কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। আমরা কি ধরে নেব সরকারের চেয়ে জেলা প্রশাসনের চেয়ে দখলদারগণ শক্তিশালী। জেলা প্রশাসন দখলদারদের শক্তি মোকাবেলা করতে অপারগ।
তিনি বলেন, আর পনেরদিন অপেক্ষা করেই কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আপনাদের বাধ্য করার যে পক্রিয়া সেটাই সম্পন্ন করা হবে।দুপুর দুইটায় অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী।
অনশন চলাকালে বক্তব্য প্রদান করেন, পরিবেশ সংগঠন গ্রিন ফিঙ্গার্স এর কো ফাউন্ডার আবু সুফিয়ান রাশেদ, রিতু ফারাবি, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য লেখক দিলরুবা খানম কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সিনিয়র সহ সভাপতি জাফর আহমদ, সহ সভাপতি লোকমান দয়াল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সদরঘাট সাম্পান সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর আহমদ প্রমুখ। অনশনে অংশগ্রহনকারী অন্য সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, সৃষ্টি, গ্রিন ফিঙ্গার্স।
বা//দৈনিক দেশতথ্য// ১০ নভেম্বর ২০২২//

Discussion about this post