চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ‘খোয়াজনগর খাল’ দখলের হিড়িক চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রভাবশালীরা এলাকার সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত এই সরকারী খালে অবৈধভাবে ইটের খোয়া আর খুঁটি দিয়ে প্রথমে দখল করছেন। ভরাট করা জায়গার জমির মালিক বনেও যাচ্ছেন রাতারাতি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সকলের জন্য উন্মুক্ত এ খোয়াজনগর খালে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাধা পাচ্ছে পানি চলাচল। প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানও খচ্চপ গতি বলে অনেকের অভিযোগ। ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তার কাছে অনেকবার জানালেও কোন পদক্ষেপ নেই বলে খোয়াজনগর গ্রামের লোকজন জানান।
সরেজমিন দেখা যায়, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ‘খোয়াজনগর খাল’ টি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ইসলাম চেয়ারম্যান বাড়ির পাশ সংলগ্ন এলাকায় ইছানগর ৯ নম্বর ওয়ার্ড এর অধীন মোশাররফ নামে এক ব্যক্তি দিন দুপুরে খালে ইটের খোয়া ফেলছেন। আর খালে খুঁটি গেড়ে দখল করছেন খালের জমি। পরে খালের মাঝখানে টিন দিয়ে ঘিরে রেখে মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন খালের অধিকাংশ জায়গা।
কয়েকটি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন করলেও আমলে নিচ্ছে না প্রভাবশালী দখলদারেরা। ফলে স্থাপনার নির্মাণকাজ এখনো চলছে। অন্যদিকে প্রভাবশালী কতৃক ইছানগর খালটিও ভরাট করার কারণে বিপড়ে পড়েছে খালে চলাচলকারী সাম্পান মাঝি ও স্থানীয় জনসাধারণ।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে কর্ণফুলী উপজেলা অবস্থিত। কর্ণফুলী নদী থেকে একাধিক শাখা প্রশাখা খাল প্রবাহিত হয়েছে এ উপজেলায়। খালগুলো দিয়ে পাকিস্তান আমল হতে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চলাচল। অথচ তা জবর দখলের ফাঁদে পড়েছে।
তথ্যমতে পাওয়া যায়, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের প্রাচীন এই খোয়াজনগর খালটি ছিল বৃটিশ আমলের তৈরি। খালটির উৎপত্তি নয়াহাট সেতুর পাশ দিয়ে বয়ে ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ি হয়ে নওয়াব আলী মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত। ওখান থেকে উত্তর দক্ষিণ মুখে নাজিরের দোকান বরাবর সীমারেখা নকশায়। খতিয়ানে উল্লেখ্য রয়েছে আর এস ৬৯৪ দাগের তৎকালিন মালিক ভারত বর্ষ । বি এস দাগ ৪৯৪। পি এসে স্থানীয় লোকজনের নামে বন্দোবস্তি দেওয়া হয়। খোয়াজনগর খালে জমির পরিমাণ ৮ একর ৮০ শতক। পূর্বে খালটির প্রস্থ ছিল ৭০ থেকে ৫০ ফুট। বৃটিশ শাসনের পরে খালটি দুপাশের কিছু জমি চরপাথরঘাটা ২ নং ওয়ার্ডের প্রয়াত মতিউর রহমানের ভাইবোন এবং শহরের আবদুল হক দোভাষের নামে ইজারা বন্দোবস্তি হয়। তবে এ যাবত কারো নামে বিএস হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়নি।
এলাকার সাম্পান মাঝি মোঃ আলা উদ্দীন, আব্দুল মালেক, ইলিয়াছ, সেলিম ও আবছার বলেন, ‘আমরা এ খাল দিয়ে ৩০/৪০ বছর ধরে নৌ-চলাচল করিয়ে জীবিকা নির্বাহী করি কিন্তু গত কয়েকদিন মাস থেকে একে একে খালের উপর নানা স্থাপনা নির্মাণ করছে। অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে এবং ভেতরে বিল্ডিং তৈরী করছে। সরু হয়ে গেছে খাল।’
কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি এস এম পেয়ার আলী বলেন, ‘খাল দখল করার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রামের মানুষেরা চলাচল করতে পারছে না। নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে অনেক গরিব মানুষের রোজি রোজগারে বাধা পড়েছে। সরকারের কাছে যার প্রতিকার চাই।’
চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছাবের আহমদ বলেন, ‘খাল দখল হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার শিকার হবে। চরপাথরঘাটার সকল খাল উদ্ধার করে যথাযথ সংস্কারের দাবী জানাচ্ছি।’
স্থানীয়দের পক্ষে আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘এই খালটি দখলমুক্ত করা। অতীব জরুরী। শিকলবাহার খালটি যেমন খনন করা হয়েছে। তেমনি খোয়াজনগর খালটি পুনরুদ্ধারের এখনই মোক্ষম সময়। কিন্তু দখলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ি করেছেন।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ পিযুষ কুমার চৌধুরী জানান, ‘খোয়াজনগর খালটির নকশা দেখে কতটুকু খাল দখল হয়েছে সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিয়ে খালটি উদ্ধার করা হবে। দখলদাররা খাল তীরে অবৈধভাবে যদি স্থাপনা গড়ে তোলেন তা উচ্ছেদ করা হবে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post