কর্ণফুলীর ২৭ এনজিও করছে কী?

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ২৭ টি এনজিও সংস্থা কাজ করলেও বেশির ভাগ এনজিওর বিরুদ্ধে নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠছে।

এসব এনজিও গুলো বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজ করার অঙ্গীকার করলেও পরে অধিকাংশ এনজিও নিজেদের স্বার্থ হাসিলেই ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানা যায়। বহু এনজিও আর্থসামাজিক উন্নয়নের বদলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণাসহ ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম চালিয়ে হঠাৎ উধাও হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসছে এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে।

সচেতন মহলের দাবি, এসব এনজিওগুলো এখনো কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের তদারকির বাইরে রয়েছে। কোন এনজিও কি বিষয় নিয়ে কাজ করে সে তথ্যও উপজেলার কাছে নেই।

জানা যায়, স্বাস্থ্যসেবার নামে অনেক এনজিও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন ছাড়াও কর্ণফুলীতে ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এসব সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কেও অবগত নয়। ইতিমধ্যে ডাবল মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে কয়েক শতাধিক গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা নিয়ে এখনো উধাও ‘পথিকৃৎ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ’ নামক অনুমোদনহীন এক প্রতিষ্ঠান।

আবার কর্ণফুলীতে সঞ্চয় করা ও ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে সোস্যাইল অ্যাসোসিয়েশন অব সোসাইটি ‘সাস’ নামে আরেকটি এনজিও সংস্থা। যাদের অফিস ছিলো চরপাথরঘাটার খোয়াজনগর বশির মেম্বার বাড়ি।

তথ্যমতে, কর্ণফুলীকে কাজ করছে এমন এনজিও সংস্থাগুলো হলো-সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক (শিকলবাহা চৌমুহনী), মমতা (শিকলবাহা কলেজ বাজার), ব্যুরো বাংলাদেশ (শিকলবাহা), আশা (চরপাথরঘাটা), ব্র্যাক ( শিকলবাহা), উদ্দীপন (চরপাথরঘাটা), কোডেক (শিকলবাহা), আইডিএফ (কার্যক্রম কর্ণফুলী অফিস শান্তির হাট), কারিতাস (জুলধা), পদক্ষেপ (চরলক্ষ্যা), বিজ (চরপাথরঘাটা), অন্তর (চরপাথরঘাটা), বিডস (চরপাথরঘাটা), ডিএসকে (চরপাথরঘাটা), শক্তি ফাউন্ডেশন (চরপাথরঘাটা)
, গণ উন্নয়ন প্রচেষ্টা (চরপাথরঘাটা), টিএমএসএস (শিকলবাহা), এসএসএস (শিকলবাহা), গাক (শিকলবাহা), প্রশিকা (চরপাথরঘাটা), রিক (চরলক্ষ্যা), পড়ালেখা (চরলক্ষ্যা), নিষ্কৃতি (চরপাথরঘাটা), আহছানিয়া মিশন (শিকলবাহা),
রূপা (শিকলবাহা), সুকন্যা (শিকলবাহা), ইপসা (শিকলবাহা)। এসব এনজিওদের আবার একাধিক শাখা রয়েছে।

উপরে নাম উল্লেখিত ২৭ টি এনজিও’র মধ্যে ২১টি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন আছে কিনা জানা যায়নি। বাকি ৬ এনজিও’র মধ্যে ‘সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক’ মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। ২৪ ঘন্টা তাঁদের ডেলিভারি সেবা উন্মুক্ত। কারিতাস এনজিও দিচ্ছেন টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ, শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন রুপা ও পড়ালেখা নামক এনজিও, সুকন্যা কাজ করছেন নারী উদ্যোক্তাদের নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে। ইপসা কাজ করছেন মহিলাদের অধিকার নিয়ে।

গত কয়েক বছরের তথ্য ও কর্ণফুলীর একাধিক লোকজন জানিয়েছেন, ডিএসকে নামক এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে সাধারণ মানুষকে খুবই অতিষ্ঠ করে রেখেছেন। আচরণেও বেপরোয়া অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে। সাবেক ইউএনও শাহিনা সোলতানা (বর্তমানে ডিডিএলজি) থাকাকালে এ এনজিও’র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল।

এছাড়াও আইডিএফ এর কোন অফিস কর্ণফুলীতে নেই। তাঁদের অফিস রয়েছে পটিয়ায়। ফলে, কোন গ্রাহককে অর্থ উত্তোলনসহ নানা কাজে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাঁদের ৬০ টির অধিক ডেইরি ফার্মে লেনদেন। সেক্ষেত্রে কর্ণফুলীতে মমতা এনজিও স্থানীয় মানুষের জন্য একাধিক জনসচেতনতামূলক প্রকল্প/কর্মসূচি পালন করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

কর্ণফুলী উপজেলার এনজিও সংস্থার সমন্বয়কারী মো. ওসমান হোসাইন জানিয়েছেন, ‘ছোট উপজেলা হিসেবে এনজিও’র সংখ্যা অনেক বেশি। বেশির ভাগ এনজিও’র টার্গেট ডাবল মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে মাসিক কিস্তিতে টাকা উত্তোলন ও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা। অথচ কর্ণফুলীতে মাদক নির্মূলে গণজনসচেতনতা জাগরণে কোন এনজিও কাজ করে না। এছাড়া পরিবেশ ও নদী রক্ষা নিয়েও কাউকে কাজ করতে দেখিনি।’

তিনি আরও বলেন, উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় এনজিওদের পক্ষ থেকে কোন প্রতিনিধিকে ডাকা হয় না। উপজেলা থেকে কোন চিঠিও পাঠানো হয় না। যদিও উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি এনজিও সংস্থা গুলো নানা অবদান রাখছেন।’

কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এস এম নওশেদ মোর্শেদ বলেন, শুধুমাত্র আমাদের এখানে এনজিওর মধ্যে ব্র্যাক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে। এর বাইরে কেউ কাজ কিনা আমার জানা নেই।’

কর্ণফুলী ইউএনও মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ঋণ কার্যক্রম চালাতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন লাগে সেটা সত্য। কার্যত এনজিওগুলোর তালিকা ও সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধি রয়েছে, অফিসে আসলে হয়তো বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারব।’

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

 প্রিন্ট করুন