জে.জাহেদ, স্টাফ রিপোর্টারঃ চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা থেকে রাতের আঁধারে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে জাটকা ইলিশ।
নিষিদ্ধ জাটকা ইলিশ নিয়ে চলছে তাঁদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।আরো অভিযোগ রয়েছে, এ উৎসবে সামিল রয়েছে খোদ জেলা ও উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অসাধু কর্মকর্তা।
যদিও সাগর কিংবা নদ-নদীতে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় দেশজুড়ে চলছে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান। কিন্তু তবুও থামানো যাচ্ছে না জাটকা নিধন। কর্ণফুলীর এপার ওপার কোন না কোন ঘাটে সুযোগ বুঝে জাহাজ থেকে জাটকা নামানো হয়। পরে তা সড়কে পথে পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সংঘবদ্ধ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ইলিশ সম্পদ নষ্ট করে জাটকা নিধন করে উপার্জনের পথ খুঁজে নিয়েছে।
জানা যায়, অল্প দিনেই জাটকা বিক্রি করে এসব ব্যবসায়ির গাড়ি-বাড়ি আর সহায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখনো তাদের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেননি। কেননা এ ব্যবসার সাথে জড়িত প্রভাবশালী কিছু মৎস্য ব্যবসায়ি এবং স্থানীয় পর্যায়ের কিছু নেতা।
সূত্র জানায়, চক্রটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাজার এবং জেলায় জাটকা পাঠাতে সড়ক ও নৌ পথে হাইওয়ে পুলিশ ও নৌ পুলিশকে ম্যানেজ করে নিষিদ্ধ জাটকার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাটকা পাচার যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মৎস্য বিভাগের দাবি তাঁরা সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অভিযান চালিয়ে জাটকা জব্দ করবেন।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাটকা রক্ষা কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি ভাবে জেলেদের দেয়া হয় প্রনোদনাও। কিন্তু এসব কিছুর পরেও রক্ষা হচ্ছে না জাটকা ইলিশ। প্রায় প্রতিদিনই কর্ণফুলীর উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর এলাকার নদী সংলগ্ন বিভিন্ন ঘাটে জাটকা মাছ তোলা হচ্ছে। আর প্রকাশ্যেই তা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পাচার করা হচ্ছে।
জানা যায়, অতি লাভের আশায় নতুন কিছু ব্যবসায়ি এ কাজের সাথে জড়িত। এই সিন্ডিকেট চক্র নিষিদ্ধ সময়ে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে এসব জাটকা নিধনে ভূমিকা রাখছেন।
কর্ণফুলী এলাকার জেলে বাহাদুর ও শামশু জানান, ‘একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র নদী থেকে ইলিশ শিকার করে সড়ক ও নৌ পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে।
একাধিক জেলেদের অভিযোগ, ‘যারা জাটকা ও ডিমওয়ালা ইলিশ পাচার চক্র পরিচালনা করছে তারা থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করি।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে বলেন, ‘কর্ণফুলীতে জাটকা পাচারে আমাদের নিয়মিত অভিযান ও সচেনতার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় বাজারে জাটকা ইলিশ মাছ বিক্রি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলীকে একাধিকবার কল করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘মুলত যারা প্রকৃত মৎস্য ব্যবসায়ী তারা জাটকা নিধনের সাথে জড়িত নয়। নতুন নতুন কিছু লোক জাটকা নিধনে জড়িয়ে পড়ছে। এরা কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মা ইলিশ শিকার করছে। কর্ণফুলীর কোন কোন ঘাটে জাটকা পাচার হচ্ছে আমরা বিষয়ে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।’
সদরঘাট নৌ পুলিশের ওসি মোঃ একরামুল হক বলেন, ‘রাতে দিনে আমাদের নৌ পুলিশ টহলে থাকে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই অভিযান চালিয়ে জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। জাটকা পরিবহন বা নিধনের খবর আসলে যে করেই হোক সেটা প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করার চেষ্টা করছি ।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বাংলাদেশ কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার লেঃ কর্ণেল আশফাক বিন ইদ্রিস এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কর্ণফুলীর উপজেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘জাটকা ইলিশ ধরা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি কারেন্ট জাল ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ। ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। সুতরাং জাটকা ইলিশ বেচা বিক্রি আইনত অপরাধ। সঠিক তথ্য পেলে যেকোন সময় অভিযান করবে ভ্রাম্যমান আদালত।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post