জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: দিনে দিনে অব্যাহত দখল, অবকাঠামোগত স্থাপনা নির্মাণ ও শহর কূলে চর জেগে ওঠাসহ নানা কারণে কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ কমে যাচ্ছে। ফলে, নদীর দক্ষিণকূলে ভাঙছে পাথরে ঘেরা চরপাথরঘাটা, গড়ছে শহর কূলে একের পর এক চর। কর্ণফুলী নদীর স্রোতে গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে দিন দিন।
তথ্য বলছে, ১৯৯০ সালে কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ ছিল প্রায় ৯০০ মিটার। এই নদীর উপরেই ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের শাহ আমানত তৃতীয় সেতুটির অবস্থান। সেতুর শহর কূলে জেগে ওঠা চর দখল করে বস্তিসহ নানা স্থাপনা গড়ে ওঠে। ফলে, সেতু এলাকায় নদীর প্রস্থ কমে হয়েছে প্রায় ৫০০ মিটার। ৩৩ বছরে কমেছে ৪০০ মিটার প্রস্থ।
অভিযোগ উঠেছে, কর্ণফুলী নদীর তৃতীয় সেতুর আশপাশে জেগে ওঠা চর দখল করে বস্তি-বাণিজ্য করার। একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট ছিন্নমূল দরিদ্র লোকজনকে ঘরভাড়া দিয়ে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখে অন্তত ৩৫ একর সরকারি খাসজমি দখল করে রেখেছেন।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন ফিরিঙ্গী বাজার মনোহরখালী খাল পর্যন্ত একটি জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, সেতু এলাকায় জোয়ারের সময় নদীটির প্রস্থ ৫০০ মিটার আর ভাটার সময় ৪১০ মিটার। অথচ ২০১৪ সালে এডিবির পরিমাপ অনুযায়ী, সেতু এলাকায় নদীর প্রস্থ ছিল ৮৮৬ মিটার। চাক্তাই খালের মুখে প্রস্থ ছিল ৮৯৮ মিটার, পরে কমে হয়েছে ৪৩৬ মিটার।
চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর গবেষণা বলছে, অতীতে কালুরঘাট থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর গড় প্রস্থ ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ মিটার। এখন শাহ আমানত সেতু এলাকায় এর প্রস্থ ৫২০ মিটার।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এই নদীর অবৈধ স্থাপনা ২ হাজার ১১২টি। কিন্তু কিছুদিন আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। আদালতের নির্দেশ আছে, পাড়সহ নদীর জায়গা কোনোভাবেই ইজারা বা হস্তান্তর করা যাবে না। কিন্তু এ নির্দেশ মানছে না বন্দর। বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম বন্দর কিছু সংস্থাকে নদীসংলগ্ন এলাকা ইজারা দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ‘নদী কমিশন চেয়ারম্যান এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন। কিন্তু এখন উল্টো স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি নগর–পরিকল্পনাবিদ আলী আশরাফ বলেন, ‘নদী ও বন্দর বাঁচাতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। জেগে ওঠা চর অবৈধভাবে ইজারা দিচ্ছে। ’
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর মালিক হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে উচ্ছেদে কিছু সমস্যা রয়েছে। নদী কমিশন আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন কিছু। সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ যদিও নতুন করে স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে বন্দর সচিব ওমর ফারুকও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//