Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 7:00 pm

কলকারখানা অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ

নাম নেহারুল ইসলাম। পদে কলকারখানা অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেও করেন কেনাকাটার কাজ। এই সুবিধা নিয়ে তিনি ওই অফিসের সকল অপরাধের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি একজন সরবরাহকারীর কাছ থেকে প্রায় ৪০০ রিম সাদা কাগজ দুই মাস আগেই বদলীর আদেশ পাওয়া কর্মচারীকে (স্টোর কিপারের দায়িত্ব পালনকারী) দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে কৌশলে আত্মসাৎ করেছেন। এমন অভিযোগে ওই সরবরাহকারী তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

ওই অভিযোগে বলা হয়েছে অফিসের ষ্টোরে রিসিভকারী কর্মচারী জসিম দায়িত্ব পালন করলেও কাগজে কলমে তিনি ছিলেন বদলী। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জসিমের সাথে যোগসাজসে ঠিকাদারের প্রায় ৪০০ রিম কাগজ তিনি আত্মসাৎ করেছেন। 

তবে পূর্ব পরিকল্পিত আত্মসাত করেও সফল হতে পারছেন না এই চতুর কর্মকর্তা। তার সহযোগী হলেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ষ্টোর কিপার জসিম। তিনি বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কর্মরত।

জানাযায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রশাসন ও উন্নয়ন শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মোঃ নিহারুল ইসলাম ক্রয় কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বরত।

তিনি জরুরী প্রয়োজনে অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর জন্য কল্পনা মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রথম দফায় (৬ মার্চ,২০২৩) ১০৪ রিম কাগজ সরবরাহ দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ করেন। অনুরোধ মোতাবেক ২য় দফায় (১৩ মার্চ ২০২৩) আরো প্রায় ৪শ রীম কাগজ সরবরাহ করে কল্পনা মিডিয়া।

মোঃ নিহারুল ইসলাম সরবরাহ করা কাগজের দাম পরিশোধ না করে কল্পনা মিডিয়া কর্তৃপক্ষকে জুন ক্লোজিংসহ বিভিন্ন অজুহাতে ঘোরাতে থাকেন। আগষ্ট মাসে মোঃ নিহারুল ইসলাম কল্পনা মিডিয়া কর্তৃপক্ষকে জানান, তারা শুধুমাত্র প্রথম দফায় ১০৪ রীম কাগজ নিয়েছেন। এরপর আর কোন কাগজ নেননি।

পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ষ্টোর কিপার জসিম গত জানুয়ারী মাসে বদলির আদেশ হলেও তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলায় যোগদান করেন এপ্রিলে। আর এর আগ পর্যন্ত অবৈধভাবে প্রধান কার্যালয়ে দায়িত্বপালন করেন।

এই সুযোগে কলকারখানা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ নিহারুল ইসলাম জসিমকে দিয়ে রিসিভ ভাওচারে স্বাক্ষর করিয়ে মালামাল গ্রহন করেন। তারপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৩ মার্চে সরবরাহ করা কল্পনা মিডিয়ার ৩শ ৯৫ রিম কাগজ তারা দুজন মিলে আত্মসাৎ করেন।

এঘটনায় পরে নিহারুল ইসলাম এই কাগজের বিল পরিশোধ না করে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। সর্ব শেষ গত আগষ্ট মাসে নিহারুল ইসলাম জানান, তারা শুধু মাত্র ১০৪ রিম কাগজ প্রহন করেছেন। পরে ভূক্তভোগী যুগ্ম-মহাপরিদর্শক বুলবুল স্যারকে বিষয়টি অবগত করেন। তিনি বিভিন্ন ভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে কোন সমাধান করতে পারেননি।

পরবর্তীতে অফিসের একজন কল্পনা মিডিয়ার মালিককে জানান, আপনার কাগজ ভ্যান চালকের কাছ থেকে জসিম স্টোরকিপার হিসাবে রিসিভ করেছেন। সে প্রশাসনিক কর্মকর্তার চাপে পড়ে রিসিভ করেছে। ভালো ভাবে খোঁজ নিলে খুঁজে পাবেন। তার কথা অনুযায়ী মুন্সিগঞ্জ জেলাতে জসিমের কাছে বিষয়টি জানতে গেলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ন অস্বীকার করেন।

জসিম বলেন প্রধান কার্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মোঃ নিহারুল ইসলাম স্যারের কথাতে আমি সকল রিসিভ করতাম। ঐ অফিসে সবকিছু তার নির্দেশনা মোতাবেক হয়ে থাকে। এসকল ব্যাপারে স্যারদের সাথে যোগাযোগ করেন। বদলী হওয়ার পরেও আপনি এতোদিন প্রধান কার্যালয়ে কেন থাকলেন ? এমন কথার কোন ভালো উত্তোর তিনি দিতে পারেন নি।

ভূক্তভোগী জানান, পরবর্তীতে বুলবুল স্যারের নির্দেশনায় আমি কাগজ বহনকারী ভ্যানচালক বোরহানকে গত ২৯ আগষ্ট স্যারের অফিসে নিয়ে আসি। বুলবুল স্যারসহ আরো কয়েকজন অফিসারের সামনে (আমার অবর্তমানে) ভ্যানচালককে নানা ভাবে জিঙ্গাসাবাদ করেন। তারা আমার বর্ননা মোতাবেক ঘটনার সত্যতা পান।

পরবর্তীতে আমাকে ডেকে সকল বিল পরিশোধ করা হবে বলে বুলবুল স্যার জানান। আমাকে সকল পাওনা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিল দাখিল করতে বলেন তিনি।

উল্লেখ্য উক্ত মোঃ নিহারুল ইসলাম অধিদপ্তরের সকল কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনিয়ম করে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যা তদন্ত করলে প্রমান মিলবে। জামাত-বিএনপির আশীর্বাদপুষ্ট মোঃ নিহারুল ইসলাম এখন কলকারখানা অধিদপ্তরের বিশাল নব্য আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতি অনিয়ম নিয়োগ জালিয়াতির মাস্টার মাইন্ড এই নেহারুল ইসলাম এখন বহাল তবিয়াতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়। অধিদপ্তরের অধিকাংশ কেনাকাটার ক্ষেত্রে দেখা গেছে আবুর টুপি বাবুর মাথায় আর বাবুর টুপি আবুর মাথায়। নিজের ইচ্ছেমত বিল উত্তোলন করার মত অবস্থা। যার সঠিক তদন্ত করলে সত্যতা মিলবে।

জানা যায়, বিএনপি আমলের প্রোডাক্ট বগুড়া জেলার নিহারুল বিএনপি সরকারের সুপারিশে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তর থাকাকালীন সময়ে যোগদান করেন। গত ৯ আগস্ট ১৯৯৫ খ্রিঃ ডাটাএন্ট্রি অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে চাকুরী শুরু করেন এই সাবেক কর্মচারী। তারপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ কওে প্রমোশন বাগিয়ে বর্তমানে তিনি এখন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে খাতায় নাম লিখিয়েছেন। রাতারাতি নিজে বনে গেছেন দুর্নীতির বর পুত্র। অধিদপ্তরের যাবতীয় কেনাকাটা, নিয়োগ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির মাস্টার মাইন্ড এই নিহারুল ইসলাম। অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতনরা অনেকেই বিষয়টি জানলেও  কেউ তাকে লালন করছেন, আবার কেউ তার সিন্ডিকেটের হাতে জিম্বি বলে মুখে শব্দ করার সাহস পাননা। সম্প্রতি নিহারুল ইসলাম জড়িয়েছেন নতুন সমালোচনায়। দিনে দুপুরে সরকারি অফিসে বসে যোগসাজসের মাধ্যমে প্রায় ৪০০ রীম সাদা কাগজ আত্মসাদের ঘটনা সামনে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রনালয়ের সচিব পর্যন্ত গড়িয়েছে। ভুক্তভোগী তার প্রতিকারের জন্য সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। (চলবে)

জুহা//দৈনিক দেশতথ্য//সেপ্টম্বর ০১,২০২৩//