গোফরান পলাশ, কলাপাড়া: কলাপাড়া পৌরশহর সংলগ্ন বাদুরতলী মৌজায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’র সরকারি জায়গা দখল করে নিচ্ছেন বলে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
গত ক’দিন ধরে বেকু দিয়ে মাটি কেটে এ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও অভিযুক্ত প্রভাবশালী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ হাবিবুর রহমান সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুবুর রহমান’র ছোট ভাই বলে ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ।
অভিযোগ রয়েছে যে, প্রকাশ্যে পাউবো’র জলাশয় ভরাট করে দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় অবশেষে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ দু’টো কাটা গাছ জব্দ করে অভিযুক্ত প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বেকু ড্রাইভার এর বিরুদ্ধে। এছাড়া সদর তহশীলদার তাদের খাস খতিয়ানের জমি হওয়ায় স্থানীয়দের আই ওয়াশে নামমাত্র কাজে বাঁধা প্রদান করেন। আর পাউবো কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টি অবগত নন বললেও পরবর্তীতে জানান তারা আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ হাবিবুর রহমান প্রভাব খাটিয়ে বাদুরতলী মৌজায় নদী তীরবর্তী এলাকার ২২ শতাংশ জমি নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে নেন স্থানীয় আমজাদ হাওলাদার এর কাছ থেকে। জমি ক্রয়ের সময় তাকে বলেন অবসর নেয়ার পর নদীর তীরে তিনি ডুপ্লেক্স বাড়ি বানাবেন এবং সেখানে বসে কবিতা লিখবেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি ২২ শতাংশের জায়গায় প্রায় ৪৯ শতাংশ জায়গা দখলের উদ্যোগ নিচ্ছেন। যার অধিকাংশই জায়গা সরকারের।
সূত্রটি আরো জানায়, কথায় কথায় তিনি নিজেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয় দেন। তিনি যদি এতই দাপুটে ব্যক্তি হন তবে সরকার এতদিনেও কেন তাকে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিরেক্টর বা বিদেশে অ্যাম্বাসেডার হিসেবে নিযুক্ত করেননি?
কলাপাড়া সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসের সদর তহশিলদার মোঃ আলাউদ্দিন জানান, স্থানীয়দের সংবাদের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুবুর রহমানের ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান তার ক্রয় কৃত জমির বাইরে বন বিভাগের গাছ কেটে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর জায়গা বেকু দিয়ে মাটি কেটে দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। আমি তাৎক্ষণিক কাজে বাঁধা দিয়ে এসেছি। বন বিভাগের গাছ কাটায় বন বিভাগও সেখানে গিয়েছে দেখেছি। তবে সেখানে সিংহভাগ জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
বন বিভাগের কলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছ কাটায় আমরা কিছু কাটা গাছ জব্দ করেছি। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বেকু ড্রাইভার এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা আরও বলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একাধিকবার সরি বলেছেন। কিন্তু আমি বলেছি আমার কিছুই করার নেই। পরিবেশ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছ কাটায় আমরা মামলা দিচ্ছি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কলাপাড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি আমি জেনে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছি।
কলাপাড়া এসিল্যান্ড ও ইউএনও এর এ বিষয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোঃ হাবিবুর রহমান মিলন’র মুঠো ফোনে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post