নিজস্ব প্রতিবেদক: মেহেরপুরে কলা চাষের পাশাপাশি একই জমিতে কলা এবং পেঁয়াজ একসাথে চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। একদিকে যেমন কলা পাচ্ছেন তেমনি পেঁয়াজও পাচ্ছেন। একই সময়ে রোপন করায় সময় নষ্ট হচ্ছে না। একই জমিতে চাষের ফলে আলাদা করে সার দেওয়া লাগছে না দুটি ফসলের জন্য। কলা দীর্ঘ মেয়াদী ফসল তবে এর মধ্যেই কৃষকরা পেঁয়াজ করার ফলে বাড়তি মুনাফা পাচ্ছেন। এর ফলে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর এলাকায় এ চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জমির উত্তম ব্যবহার ও ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এ কলা-পেঁয়াজের সাথী ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরে এ উপজেলায় কৃষকরা পেঁয়াজ চাষ করেছিল ১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। সে তুলনায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করেছেন ১শ ৫০০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে সাথী ফসল পেঁয়াজ ও কলা ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন কৃষকরা।
মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের সাজেদুল গাজী জানান, এবছর আমি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ১ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছি। সেই সাথে সাথী ফসল হিসাবে পেঁয়াজের চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে আমার ৫শ কলার গাছ রয়েছে। এখান থেকে আমি ৪শ কাদি কলা আশা করছি। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো পাবো। সেই সাথে কলা বেশি দিন লাগে তাই এর মধ্যে আমি পেঁয়াজ চাষ করেছি। যাতে কলার জমিতেই পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এই জমি থেকে ১৪০-১৫০ মন পেঁয়াজ পাবো বলে আশা করি।
তিনি আরো জানান, এর ফলে আমি কম সময়ে দুটি ফসল পাচ্ছি। আর পেঁয়াজ ও কলার জন্য আলাদা আলাদা করে যতœ নিতে হচ্ছে না। আমাদের এলাকায় এই সাথী ফসলের চাষটা খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে এখন।
শিবপুর গ্রামের আরেক কৃষক আরিফুল ইসলাম জানান, আমি এবারে ৭ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছি। কলার মধ্যে পেঁয়াজ সাথী ফসল হিসাবে চাষ করেছি। আমার যে খরচ হয়েছে তা পেঁয়াজেই উঠে আসবে। কলা যা পাবো সবই লাভ। জমি ফেলে রেখে লাভ নাই, তাই আমরা এ কলা আর পেঁয়াজ একসাথে চাষ করছি।
রামনগর গ্রামের মিনারুল ইসলাম জানান, সুখসাগর পেঁয়াজে খরচের সংখ্যা বেশি, জমি চাষ থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত বিঘ প্রতি খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। তাই আমরা পেঁয়াজের জমিতে কলার বোগ লাগাই যাতে করে পেঁয়াজ চাষের খরচে কলা চাষটাও উঠে আসে। যেকোনো একটি ফসলে যদি ভালো দাম না পায় তাহলে আরেকটির ওপর ভরসা থাকে পুরো ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই আমারা এক সাথে দুই ফসলের চাষ করি এবং এক সাথে দুই ফসলে আমারা লাভবান হই।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, আমরা কৃষকদের কলার সাথী ফসল হিসাবে পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সাথে আমরা কৃষকদের সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। আর কৃষকরা কলার জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। এটি খুবই লাভজনক। আগামীতেও এ সাথী ফসলের চাষ বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানান, আবহাওয়া অনেকটাই অনুকুলে থাকায় কৃষকরা বেশ লাভবান হয়েছেন।
কলা ও পেঁয়াজের এক সাথে দুই ফসল চাষে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। এছাড়া কলার সাথে পেঁয়াজ, কচুর সাথে পেঁয়াজ, কলার সাথে হলুদ এক কথায় একটার সাথে আরেকটা চাষের সুযোগ থাকে সেগুলোর সাথে সাথী ফসল চাষে আমরা সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আমরা কলার প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ সাথী ফসলের সম্প্রসারণ করছি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পর মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মাসুম আব্দুল্লাহ জানান, আমরা কৃষকদের কলা ও পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। এর ফলে কৃষকরা চাষে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। কলা এবং পেঁয়াজ একসাথে সাথী ফসল হিসাবে চাষ করে মেহেরপুরের কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তারা একই সময় দুটি ফসল আবাদের ফলে খরচ কমিয়ে বেশি ফসল উৎপাদন করছেন।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

Discussion about this post